রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন এসেছিলেন তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠের অস্থায়ী হাটে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে গরু দেখছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ফিরে আর দরদাম করেই কেটেছে সময়, কিনতে পারেননি।
অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত ইকবালের সঙ্গে কথা হয় সন্ধ্যার দিকে। তিনি বলেন, "এখনও গরু ছাড়ছে না বিক্রেতারা। তারা বাজার বোঝার চেষ্টা করছে হয়ত। কাল পর্যন্ত দেখব, কাল নয়তো পরশু কিনে ফেলব।"
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ২১টি কোরবানির পশুর হাটের একটি তেজগাঁওয়ের এ অস্থায়ী হাটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। গরুও এসেছে চোখে পড়ার মত। তবে বিক্রি শুরু হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দরদাম শেষে উভয় পক্ষ অপেক্ষা করার দিকেই ঝুঁকেছেন বেশি।
এ হাটে আসা বেগুনবাড়ির বাসিন্দা আহমেদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।
“মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ মাঝারি বা ছোট গরু কিনছে বেশি। বাজারেও এই সাইজের গরু বেশি এসেছে। এছাড়া সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রেও বাজেট কমাতে হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা থেকে আটটা গরু নিয়ে এসেছেন জাফর উল্লাহ। হাটের ভেতর ঢুকতে না পেরে রাস্তায় খুঁটি গেড়ে গরু বেঁধেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
“সকাল থেইকে থেকে কাস্টমার আসা শুরু করেছে। যা দাম চাচ্ছি তার থেকে কাস্টমার অনেক কম কয়। কাস্টমার আছে অনেক, কাইলকা একটা টান যাইতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
এ হাটের মত ঈদের তিন দিন আগে জমতে শুরু করেছে ঢাকার কোরবানির পশুর অন্য বাজারগুলোও। বুধবার আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরুর পরদিন বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে শুক্রবার আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা জানান, এখন পর্যন্ত বাজারে চাহিদা বেশি মাঝারি আকারের গরুর।
“বড়টার দাম চাইছি ছয় লক্ষ ট্যাহা। কিন্তু কাস্টমার সাড়ে তিন লক্ষ ট্যাহার বেশি কচ্চে না। কাল, পরশু আরও দুইদিন হাট আছে। দেখি কী হয়।”
এ হাটে বেইলি রোডের বাসিন্দা রায়হান আলম শেখ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, এবার গরুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি।
“এই সাইজের গরু আমি গত বছর কিনেছি এক লাখ টাকার কমে। এবার দাম বেশি। বেপারিরা গরু ছাড়তেই চায় না। দাম আরও বেড়ে যায় কি না এই চিন্তা করে কিনে নিলাম।”
রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন তিনটি ষাঁড় কিনেছেন পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার টাকা দিয়ে। তার কাছেও দামটা গতবারের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “গরুর দাম গত বছরের চেয়ে একটু বেশি। তবে পার্থক্যটা খুব বেশি নয়, কাছাকাছিই আছে।”
হাট ইজারাদারের প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান নয়ন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার পর্যন্ত হাটে প্রায় ১৪ হাজারের মতো গরু এসেছে। তবে বিক্রি পুরোদমে শুরু হয়নি।
“আজ তেমন বিক্রি শুরু হয়নি, আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যার পর একটা চাপ হবে। এছাড়া আরও দুদিন সময় আছে, বিক্রি আরও বাড়বে। যা দেখছি তাতে এখনও পর্যন্ত বেশি বিক্রি হচ্ছে ছোট ও মাঝারি গরু।”
ঝিনাইদহ থেকে ১২টি বিভিন্ন আকারের গরু নিয়ে এসেছেন হামিদ উল্লাহ। তিনি বলেন, গরুর সব খাবারের দাম বেড়েছে। এ কারণে দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় নেই।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বিক্রি বেড়েছে। তবে বাজারে চাহিদা থাকলেও গরু কিছুটা কম এসেছে।
“আজ থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। কাল পরশু আরও বেশি বাড়বে। এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের মধ্যে মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখনও হাটে গরু কম আছে। রাতে আরও গরু আসবে।”