ডিজিটাল ডিভাইস হবে প্রধান রপ্তানি পণ্য: প্রধানমন্ত্রী

তৈরি পোশাকের মত আগামীতে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা ডিজিটাল ডিভাইস প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 01:03 PM
Updated : 6 July 2022, 01:12 PM

বুধবার সকালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গভর্নরসের দ্বিতীয় সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এই তাগিদ দেন তিনি।

২০১৫ সালের ৬ অগাস্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভায় ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ একটা মাত্র পণ্যের উপর আমাদের রপ্তানি নির্ভর। সেখানে আমি মনে করি ভবিষ্যতে আমাদের এই ডিজিটাল পণ্য অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস এটাই হবে সব থেকে বেশি রপ্তানিযোগ্য একটা পণ্য।

“সেইভাবে আমাদেরকে বিভিন্ন পদক্ষেপও নিতে হবে, কাজও করতে হবে।”

তিনি বলেন, “সারা পৃথিবীতে এখন যেমন গার্মেন্টস মেইড ইন বাংলাদেশ, ঠিক ডিজিটাল ডিভাইস বা পণ্যগুলোও ওই মেইড ইন বাংলাদেশ হিসেবেই রপ্তানি হবে সেটাই আমরা চাই।”

সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এরই মধ্যে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খ্যাতনামা ১৫টা কোম্পানি মোবাইল ফোন সেট এখানেই তৈরি করছে। তাতে আমাদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে। আবার বিদেশে রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারছি।

“যেহেতু মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা আমাদের ফোন এবং ল্যাপটপ আজকে যে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে আমাদের দেশেরও সুনাম বাড়ছে এবং মানুষও আরও আকর্ষিত হচ্ছে কারণ সাউথ এশিয়া এবং সাউথ ইস্ট এশিয়াতেই একটা বিরাট মার্কেট রয়েছে।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলারও তাগিদ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সব সময় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলবো এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।“

আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে আমরা হাই-টেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। আর সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে সজীব ওয়াজেদ জয়েরই পরামর্শ ছিল।“

সরকারপ্রধান বলেন, “সারা দেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বা আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে এবং স্কুল পর্যায় থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ৯টি পার্ক স্থাপনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

“হাই-টেক পার্কগুলোতে হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে ট্যাক্স মওকুফ, কাস্টম ডিউটি মওকুফসহ ১৪টি প্রণোদনা সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে, যাতে আরও অধিক পরিমাণে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে।”

এসব পার্কে বেসরকারি উদ্যোগে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে এসব কোম্পানিগুতে আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।

হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ আমাদের যুব সমাজ আসলে তারা খুবই মেধাবী, একটু সুযোগের দরকার। সেই সুযোগটা পেলে তারা নতুন উদ্ভাবন করতে পারবে, যা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও কাজে লাগবে আবার বিদেশেও তা পাঠাতে পারব। “আমাদের ছেলে মেয়েরাও দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। সেই দিকে খেয়াল রেখে আমরা বিভিন্ন সুযোগ করে দিতে চাচ্ছি।”

ডিজিটাল অর্থনীতির বাস্তবতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৩ বছর আগে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে তা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি।”

এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, এজন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “৬৪ জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।

“চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও উদ্যেক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সরকার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে দুটি শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে।”

পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলাভিত্তিক এমন ইনকিউবেটর করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে যেখানে ইউনিভার্সিটিগুলোতে আমরা সুযোগ পাব, যাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা হয় এবং আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চ প্রযুক্তির ৩৩টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলিউশন এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে-যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিকস, ব্লকচেইন, রোবোটিকসসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন হবে।”