নতুন লোগো নিয়ে নতুন লক্ষ্যে বিজিএমইএ

নয়টি বিন্দুতে নয়টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সাজিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 03:13 PM
Updated : 5 July 2022, 03:13 PM

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংগঠনটির নতুন একটি লোগো উন্মোচন করা হয়। তিন রঙের নয়টি বিন্দুকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই লোগো।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মিরান আলী বলেন, “উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবর্তন আসবেই। তার জন্য প্রয়োজন নিজেদের ভেতর ও বাইরের জগতের সঙ্গতি। আমাদের মূল আদর্শ প্রকাশের জন্য পরিচয় রূপান্তরের সময় এসে গেছে।

“বিজিএমইএ নাইন ডট লোগো দিয়ে অসংখ্য ভূমিকাকে স্বাগত জানায় এবং নতুন লিগেসির গল্প বলে, যা শুধু লোগো নয়, আমাদের নতুন পরিচয়।”

নতুন লোগোর এসব ‘ডট’ দিয়ে জনগণ, অন্তর্ভুক্তি, স্বচ্ছতা, অবকাঠামো, উদ্ভাবন, আবর্তন, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ও পরিবেশকে বোঝাচ্ছে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান অনুষ্ঠানে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে ‘অভূতপূর্ব সাফল্য’ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ প্রথম।

“বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাকের শেয়ার ছিল ৬.২৬ শতাংশ, অর্থাৎ আমাদের সামনে সুযোগ অপরিসীম। যদিওবা ২০২১ সালের পরিসংখ্যানটি এখনও প্রকাশ হয়নি, আশা করছি ২০২১ সালে আমাদের বৈশ্বিক শেয়ার ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা আমাদের শেয়ার ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে পারব।”

গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ব্যাপক অগ্রযাত্রার বর্ণনা দিয়ে ফারুক হাসান বলেন, “আমরা আমাদের এই শিল্পটিকে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে, বিগত দশকে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি, সবুজ শিল্পায়ন, শ্রমিকের কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত ১৬৩টি লিড (এলইইডি) সার্টিফায়েড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে প্লাটিনাম ৪৯টি এবং ১০০টি গোল্ড। বিশ্বের সেরা ১০০টি লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানার মধ্যে ৪১টি বাংলাদেশে। আরও ৫০০টির মতো কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

গত এক দশকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

“এশিয়ার দেশ জাপান, যা কিনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক আমদানিকারক দেশ, সেখানে আমাদের পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছর এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। পোল্যান্ডে আমাদের রপ্তানি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করছে। আমরা যদি সামগ্রিকভাবে অপ্রচলিত বাজারগুলোর ব্যাপারে আরও মনোযোগী হই, তাহলে আমাদের সামনে বিপুল সম্ভাবনার জায়গা রয়েছে|”

এত সাফল্যের মধ্যেও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ আরও কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, গত দেড় বছরে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২ শতাংশ। প্রতি কেজি সুতার দাম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৩ দশমিক ০৬ ডলার, ২০২২ সালের মে মাসে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৯৬ ডলার হয়েছে।

আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেইট ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় গত দুই বছরে কন্টেইনার ভাড়া প্রায় ৩৫০ শতাংশ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে তথ্য দেন ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, ডাইস, ক্যামিক্যালের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। এছাড়াও মজুরি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ব্যাংক চার্জ, ফ্রেইট চার্জ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বায়নের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে বিজিএমইএকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। সে লক্ষ্যেই নতুন লোগোতে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ।

“পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করতে অনেক সময় আমরা কুণ্ঠা বোধ করি। কিন্তু পরিবর্তনকে এড়িয়ে যেতে পারি না। আপনি যদি পরিবর্তন সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে পরিবর্তন আপনাকে তৈরি করে নেবে। পোশাক খাত যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না যায়, এখন থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।”