এছাড়া কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আদা-রসুনসহ অন্যান্য মসলার দামেও গত বছরের তুলনায় তেমন একটা হেরফের হয়নি বলে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে চলতি সপ্তাহে নতুন করে কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে দেখা যায়নি। তবে আগের মতই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস, মুরগি, ডিম, মাছ, আলুসহ বেশ কয়েকটি পণ্য।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত মঙ্গলবার থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ১০ দিন ধরে প্রতিকেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়ে আসা দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
“তবে এ দাম টিকবে কি না সেটা বলা মুশকিল,” বলে মন্তব্য তার।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও পাড়া মহল্লার খুচরা দোকানগুলোতে এখনও এর প্রভাব পড়েনি। আগের মত প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরই রয়ে গেছে।
পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২২ টাকা হওয়ার পরও মৌসুম শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এটির দাম বাড়তে থাকায় চলতি সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারি তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
পেঁয়াজের মত বাজারে এখন আমদানি রসুন ও আদার দামও কমতে শুরু করেছে। চীনের রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকা ছিল। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। চীন থেকে আসা আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের একজন মসলা বিক্রেতা জানান, এখন আদা ও রসুনের যেই দাম আছে তা নাগালের মধ্যেই আছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দাম না বেড়ে উল্টো চীনের রসুনের দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা করে কমেছে।
ঈদের আগে আর দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমদানির গতি বেড়ে যাওয়ায় ও পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আছে।
কারওয়ান বাজারে একটি মসলার দোকানের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, এদিন লবঙ্গ প্রতিকেজি ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা, গোল মরিচ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, এলাচ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মসলার বাজারের নিয়মিত ক্রেতা একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদা রসুনের এখন যেই দাম আছে সেটা মেনে নেওয়ার মত। পেঁয়াজের বাজারটা যেন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বাজারে সয়াবিন তেলের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় লিটারে ৫/৬ টাকা করে কমেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। গত রোববার ভোজ্য তেল মিল মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমার কারণে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বাজারে এখন খোলা প্রতিকেজি পাম সুপার তেল ১৬০ টাকা (লিটার ১৪২ টাকা) ও সয়াবিন তেল ১৯৬ টাকায় (লিটার ১৭৬ টাকা) বিক্রি হচ্ছে বলে জানান আনছার জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী।
অবশ্য মিল মালিকরা খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮০ টাকা লিটার হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন।
বাজারে এখন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেশ কয়েক বছর প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা করে বিক্রি হওয়ার পর দাম বাড়তে শুরু করে চলতি বছরের শুরুতে। গত মার্চে রোজার আগে গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকায় পৌঁছে যাওয়ার পর তা আর কমেনি।
সবজির বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় শসা, পটল, ঢেঁড়শসহ বেশি কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে। অন্যগুলো স্থিতিশীল রয়েছে। শসা প্রতিকেজি ৬০ থেকে কমে ৪০ টাকায়, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে কমে ৩০ টাকায়, লাউ ৬০ থেকে কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান দোকানিরা।
তবে বছরজুড়ে প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া পেপের দাম বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। একইভাবে গোল আলু এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০ টাকায় যা দুইমাস আগেও ২৫ টাকার মধ্যে ছিল।
এদিকে সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও বাজারে এর প্রভাব এখনও পড়েনি। এবারের বোরো মৌসুমের শুরুতে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া চলের দাম গত একমাস ধরে একই রকম রয়েছে। সম্প্রতি চালের আমদানি শুল্ক অনেক কমিয়ে বেসরকারি খাতে আমদানির পথ উন্মুক্ত করেছে সরকার।
কারওয়ান বাজারে কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সির বিক্রেতা আপিল উদ্দিন জানান, সেই যে বাজার উঠল আর কমলো না। মিনিকেট এখনও মানভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, বিআর আটাশ ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, মোটা চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।