ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত কমেছে

অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ কমে গেছে।

শেখ আবু তালেববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 03:12 AM
Updated : 30 June 2022, 04:39 AM

অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে তা নেমে এসেছে ৪২ হাজার ২৭২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।

আর এক বছরের হিসাবে আমানত কমেছে ৬২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছর মার্চে এনবিএফআইগুলোর হাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বাংলদেশ ব্যাংক বুধবার ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানেই আমানত কমার বিষয়টি উঠে এসেছে।

এর পেছনে পি কে হালদারের অর্থ লোপাটসহ কয়েকটি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা এবং গ্রাহকদের আস্থা কমে যাওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আলী খান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখনো কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো খাতে।’’

“এগুলো না হওয়ায় গ্রাহকরা এনবিএফআইয়ে অর্থ রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।”

সুদ হার কমে যাওয়াও আমানত কমার পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন ইফতেখার আলী।

তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ, সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেন আসবেন গ্রাহক। এসএমএমই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু সেখানেও তেমন অগ্রগতি নেই। এজন্য আমানত সংগ্রহেও এনবিএফআইগুলো সুদ হার বাড়াতে পারছে না।’’

ব্যাংক খাতে ঋণের সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আমানতের সুদ হার হবে মূল্যস্ফীতির উপরে।

কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদ হারের ওপর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোনো সীমা রাখা হয়নি। জুলাই মাস থেকে আমানতের বিপরীতে ৭ এবং ঋণে ১১ শতাংশ হারে সুদ কার্য্যকর করতে গত ৮ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে ইফতেখার আলী বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাব করেছি এনবিএফআই খাতে আমানতে ৮ শতাংশ ও ঋণে ১২ শতাংশ সুদ হার করার। এটি করলে টিকে থাকতে পারবে অনেক প্রতিষ্ঠান।’’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের মার্চের পর প্রতি প্রান্তিক শেষেই আমানতের পরিমাণ কমছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেনি।

গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে এনবিএফআইগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৯১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে এই স্থিতি ছিল ৬৭ হাজার১৬১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

তিন মাসের ব্যবধানে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ২.৬০ শতাংশ।

আর এক বছরে ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৯২২ কোটি ২১ লাখ টাকা; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৮৬ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট আমানতের মধ্যে ৯৭.৭ শতাংশই মেয়াদী (ফিক্সড) আমানত। এই শ্রেণির আমানতের পরিমাণ কমে গেছে।

গত বছরের মার্চে ফিক্সড ডিপোজিট বা মেয়াদী আমানতের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৩০৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ বছরের মার্চে তা কমে ৪১ হাজার ৩০০ কোটি ৫২ লাখ টাকা হয়েছে।

বিতরণকৃত ঋণের ৪১.২৪ শতাংশই গেছে শিল্পে, ২৫.৯৯ শতাংশ বাণিজ্যে এবং ১৫.৩৪ শাতংশ কনজিউমার খাতে।

গত মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সিকিউরিটিজে ১ হাজার ১৭৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা মোট বিনিয়োগের ১.৭১ শতাংশ।

বর্তমানে ডজনখানেক এনবিএফআই এর আর্থিক স্বাস্থ্য দুর্বল হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ‘রেড জোনে’ রেখেছে।

চলতি মাসেও আর্থিক অনিয়ম ‍ও ‘ভুল’ তথ্য দেওয়ার অভিযোগে উত্তরা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচাককে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতকারীদের আস্থা নাড়িয়ে দিয়েছে মূলত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো পি কে হালদারের কেলেঙ্কারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

পিপলস লিজিং থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ‍সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগটি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩০০টি শাখা রয়েছে সারা দেশে। এর মধ্যে শহরে ২৭৬টি ও গ্রামীণ এলাকায় ২৪টি শাখা রয়েছে।