কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ: লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে মামলার হুঁশিয়ারি

কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে এবার শুধু জরিমানা নয়, মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 02:45 PM
Updated : 29 June 2022, 02:45 PM

বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এই হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখা এবং কাঁচা চামড়ার মান বজায় রাখার লক্ষ্যে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “নিউজের হেডলাইন যেন না হয়, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য আমরা কঠোর অভিযান চালাব, আর আমাদের এবারের অভিযান অন্যান্য বছরের চেয়ে কঠোর হবে।”

ঈদের দিনেও মাঠে থাকার কথা জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, “নগরে যদি কেউ ক্রাইসিস তৈরি করে, মূল্য বেশি নেয়, তাদের বিরুদ্ধে শুধু ফাইনের মধ্যে নয়, মামলা-মোকদ্দমা করার মাঝেও আমরা যাবো।”

তিনি বলেন, “লবণের যে মজুদ আছে, ডিভাইড এন্ড সাপ্লাইয়ের যে বিষয়টি, তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা না। আমরা দেখেছি যে এত কিছুর প্রস্তুতির মধ্যেও, একদম অন গ্রাউন্ডে, অর্থাৎ যখন চামড়া প্রিজার্ভ (সংরক্ষণ) করতে হবে, সেই সময় এরা দাম বাড়ায়। এই ধরনের কাজ যারা করবে, তাদেরকে আমরা ডিটেইন (আটক) করবো।”

তিনি জানান, দেশে বছরে লবণের চাহিদা ২৩ লাখ মেট্রিক টন। আর কোরবানির সময় লাগে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

চামড়া সংরক্ষণে যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, “যে ৮০ হাজার বা ১ লাখ টাকা দিয়ে গরুটা কিনেছে, সে যদি ২০০ টাকা খরচ করে ওই কোরবানি স্থানেই চামড়ায় লবণটা মেখে দেয়, তাহলে চামড়াটা সংরক্ষণ করা সহজে সম্ভব। চামড়াটা যেন সংরক্ষণ হয় সেটা আমাদের দায়িত্ব।”

‘চড়া দাম পাওয়ার আশায়’ কোরবানির ঈদের দিনেই ঢাকায় চামড়া আনা বন্ধ রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

মতবিনিময়ে বাংলাদেশ চামড়া বণিক সমিতির সভাপতি আফতাব খান বলেন, “লবণ ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করবো, তারাও ব্যবসায়ী, আমরাও ব্যবসায়ী, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করবো। আমি কারও প্রতি দোষ দিতে চাচ্ছি না। আমার কথা হচ্ছে, রোজার ঈদের সময় লবণের মণ ৯৫০ টাকা ছিল। কোরবানি উপলক্ষে কেন ১ হাজার ১০০ টাকা হল আমি জানি না।”

তিনি বলেন, “গতবার ৫০ থেকে ৫৬ হাজার টন লবণ লেগেছিল। গতবার তাদের হাতে তিন লাখ টন লবণ ছিল বলে বিডিনিউজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। তাই আমি অনুরোধ করবে যেন, লবণ ব্যবসায়ীরা আমাদের সহযোগিতা করেন।

“এখন চামড়ার দামটা কম, দাম বেশি থাকলে হয়তো বিষয় ছিল না। এখন চামড়ার দাম কম থাকাতে লবণ একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে।”

আফতাব খান বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গরম, কোরবানি ১৬ বছর শীতে থাকে, ১৬ বছর গরম কালে হয়। আমাদের ১০ বছর অলরেডি চলে গেছে, তারমানে আরও ৬ বছর আমাদের কষ্ট করতে হবে।

“শীতের মধ্যে চামড়া ২৪-৩০ ঘণ্টার মাঝে না লাগালেও চামড়া নষ্ট হবে না। কিন্তু গরমের সময় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মাঝে যদি লবণ না দেয়া হয়, তখন এই চামড়াটা কখনো গুণগত মান নষ্ট হয়, কখনো শতভাগই নষ্ট হয়ে যায়।”

লবণের দাম কমানোর আহ্বান না জানিয়ে বরং চামড়ার দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেন লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল কবির। তিনি বলেন, “কোরবানি আসছে দেখে ট্যানারি মালিক সমিতি বলছে যে দামটা বাড়তি। কিন্তু লবণের চেয়ে কম দামে বাংলাদেশের কোন পণ্যটা আছে? এর থেকে কম তো আর নাই।

“সারাদেশে লবণের প্রতি কেজি ২০ টাকা করে পড়ে ক্যারিইং কস্টসহ। একটা চামড়াতে ২০০ টাকার লবণ লাগে। আসল কথা হলো, চামড়ার দাম নাই দেখে লবণের ওপর দিয়ে এইটা চালাতে চাচ্ছে। সুতরাং চামড়ার দামটা আপনারা একটু বৃদ্ধি করেন। তাইলে হয়ত এই ২০০ টাকা আর নজরে আসবে না।”

তিনি বলেন, “এই বছরের চাহিদা ছিলো ২৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে, ১৮ লাখ, ৫ লাখ টন শর্ট আছে। গতবছরও ৩ লাখ টনের মতো শর্ট ছিলো। এ বছর আমরা এ ব্যাপারে হ্যান্ড টু মাউথ ছিলাম, অর্থাৎ, যতটুকু উৎপাদন হয়েছে, ততটুকুই বাজারে সাপ্লাই করেছি।

“তারপরও আমাদের হাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন দেশীয় লবণ মজুদ আছে এখন। সরকার আমদানি দিয়েছে দেড় লাখ টন। লবণের যে অবস্থা, চামড়ার ব্যাপারে লবণের কোনো সঙ্কট হবে না, সঙ্কট হওয়ার কোনো আশঙ্কাও নেই।”

কোরবানির ঈদে মিল মালিক এবং চাষিদের পক্ষ থেকে চামড়ার জন্য কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

তিনি বলেন, “লবণের জন্য চামড়া নষ্ট হবে, এটা আমরা কোনো অবস্থাতে মেনে নিতে পারবো না।  আমরা বাজার ওপেন রাখছি, মিল ওপেন রাখছি, ঈদের দিনও পাবেন। যদি ঈদের দিন আমাকে টেলিফোন করেন, প্রত্যেকটা মিলে স্টোর থাকবে।

“যেখান থেকে চান, ৮টা অঞ্চলে আমাদের লবণের মিল আছে, খুলনা, ঝালকাঠী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, পটিয়া, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা সব অঞ্চলে আছে। যখনই বলবেন, লবণ দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে, শুধু একটু সময় দিতে হবে। কোনো সমস্যা হবে না।”