বাণিজ্যে গতি আনতে ‘বিরাট’ সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিল্পায়নের মাধ্যমে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করার ‘বিরাট সুযোগ’ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2022, 01:01 PM
Updated : 27 June 2022, 01:01 PM

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে সোমবার সকালে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা রেল যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত এবং নতুন নতুন রেলপথ স্থাপন এবং সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলো খনন করছি। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করে এবং বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদান গ্রহণ করেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

সমগ্র বাংলাদেশেই আওয়ামী লীগ সরকার সেতু ও উন্নত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এসবের পাশাপাশি নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথও আমরা সচল করেছি।

“আমাদের পূববর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায়ই বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা সেটা আবার নতুন করে চালুর পাশাপাশি নতুন নতুন রেল লাইনও করে দিচ্ছি। যার ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাড়ছে।”

নিজস্ব অর্থায়নে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে অনুদান দাতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের দেশেরই এক ব্যক্তির প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিরাও সরে দাঁড়ায়; তখন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।

“তখন দেশের জনগণের পাশাপাশি আপনারাও অনেকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সবধরনের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেজন্য আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”

দেশের জনগণকে ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “তাদের সাহস এবং সহযোগিতা এবং তারা পাশে থাকাতে আমরা আমাদের নিজস্ব টাকায় এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল অঞ্চল যেটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, সেখানে এখন শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

“এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। সেখানেও আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে এবং এই অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে।”

ছবি: পিআইডি

প্রথমবার সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালু করেছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে দলের সভাপতি বলেন, “যেখানে বিদ্যুৎ, রেল এবং গ্যাস সংযোগও প্রদান করা হয়। পদ্মা সেতুটাও সেভাবেই করা হয়েছে, মাল্টিপারপাস। সেখানেও গ্যাস, বিদ্যুৎ, রেল সংযোগের সঙ্গে অত্যাধুনিক ওয়াইফাই সু্বিধাও থাকবে।”

এবার সিলেট বিভাগে পর পর তিনবার বন্যা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে যেমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে; তেমনই ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি যখন নেমে আসছে, তখন নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।”

এ দেশের যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে এগিয়ে আসায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টাই হচ্ছে দেশের জনগণের দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সেই সাথে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা; যাতে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলতে পারি।“

দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়নও করতে হবে, আবার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য যত্রতত্র শিল্প যাতে গড়ে না ওঠে এবং কৃষিজমি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এলএনজি আমদানি করে শিল্প কারকানা চলমান রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।

কোভিডকালে সরকার যেমন জনগণের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করেছে, তেমনই চলমান বিশ্ব মন্দার মধ্যে শিল্প কলকারখানা চলমান রাখতে নানারকম আর্থিক প্রণোদনাও দিয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সমস্যা আসবে এবং সেই সমস্যা মোকাবিলা করেই আমাদের পথ চলতে হবে।

“আজকে আপনারা বন্যা কবলিত মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। আর আপনারা যখন মানুষের পাশে দাঁড়ান, তখন আর আমাদের চিন্তা থাকে না। আমরা মনে করি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারব। এ ব্যাপারে সকলেই সচেতন থাকবেন।”

পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য সম্ভারে নতুন নতুন পণ্য সংযোজন এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “একাত্তরে মহান বিজয়ের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ যে ভাবমূতি অর্জন করেছিল, তা পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক অধ্যায় এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর তা নষ্ট হয় এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গতিও থেমে যায়।”

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এই তহবিল থেকে কেবল বন্যা দুর্গত জনগণই নয়, পীড়িত ও দুঃস্থ জনগণকেও এখান থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়; যেখানে তাদের সহযোগিতা কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।”

দেশে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার এবং মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার অনুদান দেয়।

এগুলো হল- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল, ইডকল, বিআইএফএফএল, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।