অগ্নি নিরাপত্তা: এবার অভিযান হবে ঢাকার বিপণিবিতানে

সারাদেশে পাঁচ হাজার কারখানায় অভিযান শেষে এবার ঢাকার দোকান ও বিপণিবিতানগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা, অবকাঠামো নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা যাচাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত বহুপক্ষীয় কারিগরি দল।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 06:17 PM
Updated : 24 June 2022, 03:21 AM

প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০৭২টি ভবন চিহ্নিত করে তা পরিদর্শনের জন্য ১১টি সমন্বিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে বলে অভিযানের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী জানান।

প্রতিটি দলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দপ্তর, এফবিসিসিআই, ডেসকো, প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়, রাজউক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সদস্যরা থাকবেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডাইফ) মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, এই পরিদর্শন কার্যক্রমে ৮২টি প্রশ্নের নতুন চেকলিস্ট মিলিয়ে দেখা হবে।

গত বছরের জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর সারাদেশের কলকারখানাগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সংস্কারের সুপারিশ তৈরির নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেই নির্দেশনার আলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নেতৃত্বে মাঠ পরিদর্শনের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করে।

বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পরিদর্শন অভিযান মার্চে শেষ হয়েছে।

“এ সময় ৫২০৬টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে সুপারিশমালা তৈরি হচ্ছে। এসব সুপারিশ নিয়ে দুই দফা পর্যালোচনা সভাও হয়েছে। ২৯ জুন আরেকটি কনসালটেশন বৈঠক শেষে সুপারিশগুলো জাতীয় কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

ঢাকার বাণিজ্যিক ভবনে যেভাবে হবে অভিযান

অভিজিৎ চৌধুরী জানান, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি তারা পেয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, বিশেষ করে মার্কেটগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যেন সুপারিশ তৈরি করা হয়। আপাতত মার্কেটের বাইরে অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবনে তল্লাশি বা পরিদর্শন হচ্ছে না।

“আমরা চেকলিস্ট চূড়ান্ত করেছি। দুই সিটি করপোরেশনের জন্য ১১টি দল গঠন করা হয়েছে। আগে আমাদের যেসব কমিটি ছিল, এর সঙ্গে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের সদস্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে হয়েছে।

“কমিটির ১৩২ জন সদস্য মিলে প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এখন জাতীয় কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে পরামর্শ করে এ মাসের মধ্যেই পরিদর্শন শুরু করতে চাইছি।”

অভিজিৎ জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি দল ১০টি করে ভবন পরিদর্শন করবে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে বাকি ভবনগুলোতে পরিদর্শন শুরু হবে।

আগের অভিযানের সঙ্গে ঢাকার অভিযানের পার্থক্য থাকবে জানিয়ে বিডার এই কর্মকর্তা বলেন, “আগে ছিল কলকারখানায় পরিদর্শন। তখন ভবনগুলো ছিল নির্ধারিত জায়গায়। কিন্তু মার্কেটের বিষয়টি ভিন্ন। এখানে কোথাও বাসাবাড়ি থাকতে পারে, কোথাও গোডাউন থাকতে পারে, অনেকগুলো বহুতল ভবন রয়েছে। তাই এই পরিদর্শন কবে শেষ হবে তা বলা মুশকিল।

“এখানে আমরা ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়গুলো দেখব। এই অভিযানকে আমরা পরিদর্শনই বলছি।”

৫০০০ কারখানায় অভিযান শেষ

প্রথম পর্যায়ে যে ৫২০৬টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে, তার আলোকে সুপারিশমালা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান বিডা ও ডাইফির কর্মকর্তারা।

বিডা কর্মকর্তা অভিজিৎ বলেন, “আমরা কয়েকভাবে সুপারিশ তৈরি করেছি। খাতভিত্তিক আলাদা সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে। আবার কমন ইনসিডেন্টওয়াইজ- যেমন ধরুন আগুনের কারণে, পরিবেশের কারণে, গ্যাস সংযোগের কারণে, পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় যে সমস্যাগুলো হতে পারে, তা নিয়েও পৃথক সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে।”

এসব কারখানায় স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করছি, যাতে দীর্ঘমেয়াদে তার সমাধান করা যায়। এখানে সাধারণ কোনো লোক দিয়ে কোনো ইন্সপেকশন করা হচ্ছে না। দলে যারা আছে, সবাই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের। তাই এই সুপারিশ ও অভিযানের গুরুত্ব অনেক বেশি।”