অবলোপন করা ঋণে দিতে হবে কর

ঋণ খেলাপিদের চাপে রাখতে অবলোপন করা ঋণের ওপর কর বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 04:47 PM
Updated : 9 June 2022, 04:47 PM

খেলাপি হওয়া ঋণ অবলোপন করলে এখন তার উপর কোনো কর দিতে হয় না। নতুন অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণি ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে খেলাপি হওয়া ঋণ অবলোপন করলে তা আয় হিসেবে বিবেচনা করে কর আদায় করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য দেওয়া বাজেট এই প্রস্তাব করেছেন তিনি।

এর মানে হল, খেলাপি হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ অবলোপন করলে ওই ঋণের ওপর কর দিতে হবে।

নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায় করে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খেলাপি ঋণ অবলোপন (রাইটঅফ) করলে সকল করদাতার জন্য করমুক্ত রাখা হয়েছে। এর পরিবর্তে ব্যক্তি করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।”

খেলাপি হওয়া মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখাই হচ্ছে অবলোপন। পৃথক হিসাবে রাখা হলেও তা আদায়ের কার্যক্রম চলমান রাখতে হয়। এতে ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপির পরিমাণ কম দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়।

২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ, যা ব্যাংক খাতে খেলাপি হওয়ার ঋণের ৫১ শতাংশের মত।

কিছু অর্থ আদায়ের পর অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকায়।

আগে পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঋণকে অবলোপন করা যেত না। ২০১৯ সালে সে নিয়ম পরিবর্তন করে সময় কমিয়ে ৩ বছর করা হয়।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২ লাখ টাকার বেশি ঋণ অবলোপনের বেলায় গ্রাহকের মামলা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকের।

ঋণ দেওয়ার পরে এক বছর পর্যন্ত কিস্তি আদায় না হলে সেই ঋণকে মন্দমানের খেলাপি ধরা হয়। ব্যাংকাররা ধরে নেন, এই ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন হারে ব্যাংকগুলোকে আয় থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন কেটে রাখতে হয়। তবে মন্দ মানের খেলাপির বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। আর এই প্রভিশন রাখতে গিয়ে অনেক ব্যাংকই মূলধন সংকটে ভুগছে।