কারসাজি খুঁজতে অভিযান হবে চালকলে

ভরা মৌসুমে চালের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারসাজি খুঁজতে এবার মিল পর্যায় থেকে অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2022, 06:39 PM
Updated : 7 June 2022, 08:52 AM

সোমবার রাজধানীতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে চাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মিল মালিক, পাইকারি বিক্রেতা, সুপারশপ ও করপোরেট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, কোনো একটা চক্র বাজারকে অস্থির করার পাঁয়তারা করছে। ইতোমধ্যে ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, সুপার শপ, মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই নিজেদেরকে সঠিক বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চালের বাজার অস্থির। 

“আমরা মিলগুলো থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করব। সবার মজুদ পরিস্থিতি আমরা নেব এবং আপনারা অবশ্যই তথ্যগুলো দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি তথ্য না দেন আমরা ধরে নেব যে আপনারা সরকারকে সহযোগিতা করেননি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমরা তথ্য নেব। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা মিলগুলোতে অভিযান শুরু করব।”

খোলা বাজারে খুচরা পর্যায়ে সরু চালের দাম বেড়ে এখন প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝারি ও মোটা চালের দামও বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা করে। বাজারে পাইজাম বা অন্যান্য মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।

বোরো ধান ওঠার পর চালের এমন মূল্য বাড়ানোর জন্য খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা উৎপাদনকারী মিলগুলোকে দায়ী করছেন। আর মিলগুলো দোষ চাপাচ্ছে ধানের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির ওপর।

এর বাইরে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কম দামে কিনে ৫ থেকে ১০ টাকা মূল্য বাড়িয়ে বিক্রির বিষয়টিও আলোচনা সভায় উঠে আসে।

অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার মাঠের চিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ২২ মে যে চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা রোববার সেটা বিক্রি করেছে ৬৫ টাকায়।

“এধরনের কারসাজির প্রমাণও আমরা পেয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। সেটা হচ্ছে পাকা রশিদ নিশ্চিত করা। কোনো স্তরের ব্যবসায়ী যদি চাল কিনতে গিয়ে পাকা রশিদ না পান আমাদের সরাসরি জানান, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। চালের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করতে হবে।“

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাবু বাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনসহ কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির নেতারা বক্তব্য রাখেন।

নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে মিল মালিক ও ধানের বাজারের মুখ্য ভূমিকা থাকলেও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর অভিযান ও জরিমানা চলছে। অথচ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিল থেকে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মিল নতুন অর্ডার নিচ্ছে না। নিলেও চাল ১০ দিন পরে দেওয়ার কথা বলে দিচ্ছে।

এ কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মিল পর্যায় থেকে অভিযান শুরু করার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার চালকল মালিক সমিতির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের অনেকেই আসেননি।

চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে সাগর অটো রাইস মিলের প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন কারণে গত রোজার পর থেকে শ্রমিকের মজুরি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ৬০০ টাকা মজুরির শ্রমিক পেতে এখন ১২০০ টাকা লাগছে।

এছাড়া ধান থেকে চাল উৎপাদনের হার এবার কমে গেছে। কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম অনেক বেশি, বর্তমানে প্রতিমণ ধান সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেটা সাধারণত ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকে। এসব বিষয় চালের বাজার ঊর্ধমুখী রাখতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে তিনি দাবি করেন।

সুপার শপগুলোর মধ্যে স্বপ্ন, আগোরা ও ইউনিমার্টের প্রতিনিধি এবং করপোরেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসিআই, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, প্রাণ, মেঘনা, আকিজ ও সিটি গ্রুপের প্রতিনিধিরা ছিলেন।