এফটিএ না হলে বাংলাদেশ ছাড়তে পারে ২০% জাপানি কোম্পানি: জরিপ

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) না হলে বাংলাদেশ থেকে ২০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি অন্য দেশে চলে যেতে পারে বলে উঠে এসেছে এক জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2022, 04:44 PM
Updated : 5 June 2022, 04:44 PM

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (জেবিসিসিআই) পরিচালিত সমীক্ষার এই ফল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

১০০টি জাপানি ও ৩০টি বাংলাদেশি বহুজাতিক কোম্পানি ওই জরিপে অংশ নেয় জানিয়ে অনুষ্ঠানে জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো বলেন, জরিপের অংশগ্রহণকারী ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১১১টি কোম্পানি আশা করছে, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে এফটিএ সই হবে।

”২০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জাপানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) উঠে গেলে তারা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজার আসিয়ান, চীন ও ভারতের মতো দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার চিন্তা করতে পারে। অথবা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।”

তৈরি পোশাক খাতের প্রসঙ্গ নিয়ে ইউজি আন্দো বলেন, “উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং দূরত্বের বিবেচনায় কোম্পানিগুলোকে ধরে রাখা মুশকিল হবে বাংলাদেশের জন্য। কারণ আসিয়ানের সাথে ইতোমধ্যে এফটিএ রয়েছে। আর ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ আসিয়ানের তুলনায় জাপান থেকে বেশ দূরে।”

এফটিএ সই হলে কিংবা বিকল্প অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ স্থানান্তর ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন জেবিসিসিআইয়ের এফটিএ বিষয়ক কমিটির এই চেয়ারম্যান।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার পর জাপানে রপ্তানির ক্ষেত্রে পাওয়া জিএসপি আর থাকবে না বাংলাদেশের জন্য। এক্ষেত্রে এফটিএ সই করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব ইতোমধ্যে জাপানকে দিয়েছে সরকার।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বলেছেন, এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হলে এখনকার জিএসপি সুবিধা থাকবে না। সেক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থাপনা দরকার, যা এফটিএ হতে পারে।

”এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে কেউ চাইলেও আগের জিএসপি সুবিধা রাখতে পারবে না, কারণ আইনি ফ্রেমওয়ার্ক নাই। এফটিএ হতে পারে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আইনি ফ্রেমওয়ার্ক।”

তিনি বলেন, এফটিএ সই হওয়ার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যে অনুরোধ বাংলাদেশ করেছে, সেটার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত সময়ে শুরু হয়, সেজন্য টোকিও’র আমলাদের সাথে কাজ করছেন তিনি।

জাপানের সঙ্গে এফটিএ করার ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হারানোর বিষয়টি বাংলাদেশের সামনে চলে আসে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সরকারি কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, “বাংলাদেশ আমদানি রাজস্ব-নির্ভর দেশ। আমাদের মোট রাজস্বের ২৭ ভাগই আসে আমদানি রাজস্ব থেকে, যাতে কাস্টমস থেকে আসে ১২ শতাংশের বেশি। ফলে এফটিএ-র বিষয় ভাবতে গেলে আমাদের অনেক দিক বিবেচনায় নিতে হবে।”

কেবল বাণিজ্য নয়, জাপান থেকে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির দিকেও বাংলাদেশ মনোযোগ দিতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মাহবুবুল হক বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদেরকে দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দিকেও মনোযোগ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে দুপক্ষের জন্য লাভজনকে উপায় বের করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে জাপানসহ অন্যান্য দেশের অগ্রাধিকার সুবিধা চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মপন্থা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

”দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর এজন্য কার্যকর বিকল্প হতে পারে। জাপানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করব।”

জাপানের পাশাপাশি চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা সরকার চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “জরিপ অনুযায়ী, এফটিএ জাপানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যদি জাপানের আগে চীন, কোরিয়া, ভারত অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দ্বিপক্ষীয় এফটিএ সই করে ফেলে; তাহলে মেশিনারি, স্টিল, মেডিকেল ডিভাইসসহ জাপানি অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগীদের কাছে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে জাপান।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাপানের সাথে বা বাংলাদেশের বর্তমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যায় মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যার বড় হিস্যা তৈরি পোশাক খাতের।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার, জেবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিউংহো লি, জেবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট শরিফুল আলম বক্তব্য দেন।