ই কমার্স: অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ

গ্রাহক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ই কমার্স কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে, তা নিরূপণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2022, 04:31 PM
Updated : 23 May 2022, 04:50 PM

সেই সঙ্গে কাদের অবহেলায় ইভ্যালি, ই অরেঞ্জ, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, আলাদীনের প্রদীপ, দালাল প্লাসের মত ই কমার্সের গ্রাহকরা লোকসান ও ক্ষতির মুখে পড়েছে তাদের চিহ্নিত করতে চার সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থ, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক, বিএফআইইউ এর প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত তিনটি রিট আবেদনের ওপর শুনানির পর সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব, শিশির মনির ও আনোয়ারুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

যেসব ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ই কমার্স মার্কেটপ্লেসের ক্রেতারা গুরুতর লোকসান ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, সেসব ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে চিহ্নিত করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

পাশাপাশি ই কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে বা আদৌ পাচার হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ নিরূপণ এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

একই সঙ্গে ই কমার্স প্লাটফর্মের ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ই কমার্স প্ল্যাটফর্মের কার্যাবলি তদারকি করতে কেন একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে রুলে।

ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই কমার্স প্ল্যাটফর্মে ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে ব্যাপক গ্রাহক হয়রানি এবং অগ্রিম অর্থ নেওয়ার পরও পণ্য না দেওয়ার প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাহকের মামলার প্রেক্ষিতে ইভ্যালিসহ শীর্ষ ই কমার্স কোম্পানিগুলোর নীতি নির্ধারকদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অনলাইন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতি অনুযায়ী একটি স্বাধীন ই কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

এর দুই দিন পর ২২ সেপ্টেম্বর দুই ই কমার্স গ্রাহকের পক্ষে আরেকটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।

ইভ্যালি, আলিশা মার্ট, ই অরেঞ্জ, ধামাকা, দারাজ, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ ও দালাল প্লাসের মত ই কমার্স মার্কেটপ্লেসের লাখ লাখ গ্রাহকের লোকসান ও গুরুতর আর্থিক ক্ষতি নির্ণয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।

এছাড়া ই কমার্স গ্রাহকদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির জন্য অর্থনীতিবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী ও অন্য অংশীজনদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি রিট আবেদন করা হয়।

ই কমার্স খাতের ৩৩ ভুক্তভোগী গ্রাহকের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আবেদনকারী এসব গ্রাহকরা বিভিন্ন ই কমার্স প্লাটফর্মে ১৬ কোটি টাকা পরিশোধের পরও পণ্য বা অর্থ ফেরত কিছুই পাননি। এ কারণে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনটিতে।

ই কমার্স খাতে প্রতারণা নিয়ে ওই সময় অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে এ ধরনের ১৭ হাজার অভিযোগ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমা পড়ে।

এদিকে ই কমার্স সংক্রান্ত সব কার্যক্রম, ই কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করা, লেনদেনজনিত ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ ও প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসনে গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়।

এ নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ওই তিন রিট আবেদন করা হয়।

এসব রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর তিনটি নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট।

ই কমার্স খাত থেকে অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই আদেশে।

সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ই কর্মাস খাত থেকে কর আদায়ের কী নীতি, আদৌ কোনো নীতি আছে কি না বা এ বিষয়ে এনবিআরের পরিকল্পনা কী, তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।

আর ই কমার্স খাতের স্বার্থে যে ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটি করেছে সরকার, তার কার্যপরিধিও জানতে চাওয়া হয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে।