অস্থিরতা ডালের বাজারে, আটা চড়ছে আরও
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 21 May 2022 12:55 AM BdST Updated: 21 May 2022 11:36 AM BdST
-
ফাইল ছবি
-
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও লাইনে দাঁড়িয়ে রোববার ঢাকার ভাষানটেক টিসিবির ট্রাক থেকে চিনি, ডাল ও তেল কিনে বেরিয়ে আসছেন একজন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
-
-
Stalks of wheat are seen on March 1, 2022 at a field in El-Kalubia governorate, northeast of Cairo, in Egypt, the world's top wheat buyer. Reuters
নতুন মূল্যে ভোজ্য তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু হতে না হতেই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ডালের বাজারে; বাড়ছে দাম, কিছু ডাল অনেক জায়গায় মিলছেও না।
নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আমদানি নির্ভর আটার দামও বাড়তে শুরু করেছে তরতরিয়ে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবেই গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটার দাম ২৫ শতাংশ এবং এক মাসের ব্যবধানে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেট ও খোলা আটা দুটোই এখন প্রতিকেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্ববাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়াই এর কারণ। তবে ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরই বেশি বাড়ানো হয়েছে আটার দাম।
আর মুগ ও মসুর ডাল, ডাবলিসহ নানা জাতের ডালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা।
উধাও হতে শুরু করেছে রেঁস্তোরায় চাহিদার শীর্ষে থাকা অ্যাংকর ডাল। শেষ মুহূর্তে যেসব দোকানে ছিল তারা কেজিপ্রতি বিক্রি করেছে ৭০ টাকাতেও।
টিসিবির হিসাবে মসুর ডালের দাম গত এক বছরে মোটা দানা ৫৩ শতাংশ, মাঝারি দানা ৪১ শতাংশ এবং ছোট দানা ২১ শতাংশ বেড়েছে। আর অ্যাংকর বা ডাবলির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ শতাংশ।
নিত্যদিনের খাবার তালিকায় থাকা ডাল ও আটা উভয়েরই দাম বাড়তে থাকার পেছনে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
একই সঙ্গে গত কয়েক মাস থেকে ডলারের দামে তেজিভাবের কারণেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে, যাতে হঠাৎ করে চড়া হয়ে পড়েছে এ দুই খাদ্যপণ্যের দাম।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও লাইনে দাঁড়িয়ে রোববার ঢাকার ভাষানটেক টিসিবির ট্রাক থেকে চিনি, ডাল ও তেল কিনে বেরিয়ে আসছেন একজন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
আমদানি করা ডালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের দামও কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে পাইকারি বাজারে। মূল্যবৃদ্ধির এই হুড়োহুড়ির মধ্যে খুচরা বিক্রেতারাও পিছিয়ে নেই।
অনেক দোকানে আগের দামে ডাল কেনা থাকলেও ভোক্তার কাছ থেকে কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি নেওয়ার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ১০০ টাকা এবং আগের সপ্তাহে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
গত কয়েক বছর ধরে মোটা দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় মিলছিল। দেশি ও নেপালি সরু দানার মসুর ডালের দাম এখন প্রতিকেজি ১৩০ টাকা, যা একমাস আগেও ১২০ টাকায় পাওয়া যেত।
রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের পাইকারি দোকান, পীরেরবাগের খুচরা দোকানে ডাবলি বা অ্যাংকর ডালের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অ্যাংকর ডাল চাইলে উল্টো বুটের ডাল নেওয়ার পরামর্শ দেন দোকানিরা।
পীরেরবাগের দোকানি বিল্লাল হোসেন জানালেন, গত এক সপ্তাহে মোটা দানার মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে। সরু মসুর ডালের দামও কিছুটা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য পাইকারি বাজার থেকে মসুর ডাল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য ডালের বর্তমান বাজার ব্যবস্থা নিয়ে দ্বিমত করছেন মৌলভীবাজারের শোভা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৯ সালের দিকেও বাংলাদেশে বর্তমানে যেটাকে বর্ধিত মূল্য বলা হচ্ছে, সেই দামে ডাল বেচাকেনা হয়েছে। মাঝখানে কয়েক বছর বিশ্ববাজারে ডালের দাম কম থাকায় দেশেও অনেক কম দামে ডাল পাওয়া গেছে।”
এখন দাম বাড়ার পেছনে তিনটি কারণ তুলে ধরেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ডালের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশে সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেও যারা আমদানি করছেন তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে সরবরাহ কিছুটা কমেছে, বাড়তে শুরু করেছে দাম।
সম্প্রতি দেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ও খোলা বাজারে আন্তর্জাতিক বিনিময় মুদ্রা ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দাম অন্তত ১৩ টাকা বেড়েছে। আগে যেখানে ৮৬ থেকে ৮৭ টাকায় এক ডলার পাওয়া যেত, এখন তা পেতে গুণতে হচ্ছে ৯০ টাকার বেশি।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে। আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
ডালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদের ভাষ্য, “এখন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডালের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে।”
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাবলির অন্যতম জোগানদাতা দেশ ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় দুইমাস ধরে সেখান থেকে আমদানি বন্ধ। অন্যদিকে একই সময়ে রোজার মাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি খরচ হয়েছে এই ডাল। বিকল্প বাজার থেকেও আমদানি হয়েছে কম।
এরপর ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও তুরস্ক থেকে আসা মসুর ডালের আমদানিও কমে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ডাল সরবরাহের গতি কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এ বছর দেশে মসুর ডালের উৎপাদন খুব কম হয়েছে জানিয়ে শফি মাহমুদ বলছিলেন, “গ্রামের কৃষকদের কাছে ডাল থাকলেও তারা এখন বিক্রি করছেন কম।
“বর্তমানে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে আমদানিকারকরা এলসি খোলার সাহস পাচ্ছেন না। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে মালের শর্টেজের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
নিজের আমদানির খবর দিয়ে তিনি বলেন, নেপাল থেকে ১৫ দিন আগের এলসির মসুর ডালের আমদানি ক্রয়মূল্য পড়ছে ১২২ টাকা। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে এই মাল ছাড়াতে হবে। ডলারের বর্তমান মূল্যে এলসির অর্থ পরিশোধ করলে দাম পড়ে যাবে প্রতিকেজি ১৩০ টাকার উপরে।
আবুল খায়ের গ্রুপ, এসিআই, সিটি গ্রুপের মতো বড় কোম্পানিগুলো ডাল আমদানি ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত আছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, এসব ব্র্যান্ডও দাম বাড়িয়েছে।
পুরান ঢাকায় ডালের পাইকারি বিক্রেতা রাজ্জাক বাণিজ্য বিতানের প্রতিষ্ঠাতা চুন্নু হাজি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ডলারের দাম বাড়ার পর আমদানি কমে গেছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা মোটা মসুর ডাল পাইকারিতে এখন প্রতিকেজি ১০৩ টাকা থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু মসুর ডাল এখন প্রতিকেজি ১২৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
“অ্যাংকর বা ডাবলি ডালের কোনো যোগান নেই। এই ডালের দাম আরও বাড়বে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেইন থেকে আসে এ ডাল।”
এই ‘সুযোগে’ দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের দামও কেজিপ্রতি অনেক বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মুগডালের পাইকারি মূল্য এখন ১১০ টাকা থেকে ১১২ টাকার মধ্যে। মুগডালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তার পরেও কেন বাড়লো, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। গত ১০ দিনে মুগডালের দামও কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে।”
দেশের বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ আরও কয়েকটি জেলায় মুগ ও মসুর ডালের আবাদ বেশি হয়।
Stalks of wheat are seen on March 1, 2022 at a field in El-Kalubia governorate, northeast of Cairo, in Egypt, the world's top wheat buyer. Reuters
এদিকে ইউক্রেইন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দেশে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আটা-ময়দার বাজারও সমান্তরালে চড়তে শুরু করেছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হঠাৎ করে ভারতের গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা। চলতি সপ্তাহে এটিকেই ‘সুযোগ’ হিসেবে নিয়ে আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। কেননা যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে আমদানি বন্ধ। সবশেষ দুই মাস গম এসেছে প্রতিবেশী ভারত থেকেই।
বাজারে এখন প্যাকেট আটা ও খোলা আটা দুটোই প্রতিকেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ময়দা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটার দাম ২৫ শতাংশ, এক মাসের ব্যবধানে ৩০ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর ময়দার দাম এক মাসের ব্যবধানে ১৮ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরবরাহ সংকট ঠেকাতে ‘সিদ্ধান্ত আসছে’
মূল্যস্ফীতি আর ঋণের চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার দশা দরিদ্র দেশগুলোর
ভারত রপ্তানি বন্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেড়েছে গমের দাম
-
ডিজিটাল হাটে কেনা গরু পছন্দ না হলে ‘ফেরতও দেওয়া যাবে’
-
ওয়ালটন টিভিতে মূল্যছাড়
-
রপ্তানি আয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক
-
পোশাক শিল্প এলাকায় শুক্র-শনি ব্যাংক খোলা
-
ব্রিটিশ ঋণ পেল আরএফএল ইলেকট্রনিক্স
-
বানভাসিদের পাশে গণসাক্ষরতা অভিযান ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
-
ইভ্যালি: রাসেল-শামীমার নামে অর্থ আত্মসাতের নতুন মামলা
-
জুলাই মাসে এলপিজির দাম বাড়ল কেজিতে ১ টাকা
সর্বাধিক পঠিত
- নাম বিভ্রাটে ছেড়ে দিয়ে বিয়ের আসর থেকে ফের গ্রেপ্তার
- লড়াই করার তাড়নাই দেখাল না বাংলাদেশ
- এনামুলকে মনে ধরেছে ডমিঙ্গোর, তবে…
- ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বাইক বন্ধ: বাইকারদের সন্দেহে বাস মালিকরা
- ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সেতু ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
- রেকর্ড হারানো লারা অভিনন্দন জানালেন বুমরাহকে
- গ্রামীণ টেলিকমকর্মীদের আইনজীবী বললেন, অর্থ পেয়েছি ফি হিসেবে
- নিখোঁজ হিলালীকে পাওয়া গেল সাভারে
- এলোমেলো বোলিং, দিশাহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার
- ‘গ্যাস সঙ্কটের’ আঁচ বিদ্যুতে, বাড়ছে লোডশেডিং