ঢাকায় ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশনে ‘সাফল্য’ তুলে ধরবে বিজিএমইএ

ঢাকায় আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ‘আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশনে’ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ‘সাফল্য’র গল্প তুলে ধরতে চায় পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 02:07 PM
Updated : 14 May 2022, 02:07 PM

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অবদান আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হবে সপ্তাহব্যাপী কনভেশনশনের মাধ্যমে। এছাড়া ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ আয়োজন করা হবে নভেম্বর মাসেই।

“বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিবাচক, চিত্তার্কষক আখ্যানগুলো বিশেষ করে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিল্প যে অনন্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, সেগুলো উপস্থাপন করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পোশাক শিল্পকে তুলে ধরা হবে।”

কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অনুপাতে তৈরি পোশাকের যে দর বাড়েনি, সেই বিষয়টিও কনভেনশনে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।

৪০টিরও বেশি দেশের পোশাক প্রস্তুতকারক, ছোট-মাঝারি ব্র্যান্ড এবং তাদের সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) এবারের সম্মেলন হচ্ছে ঢাকায়। সেই আয়োজনে নিজেদের সাফল্যের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তুলে ধরতে চায় বিজিএমইএ।

ফারুক হাসান বলেন, “মহামারীর সংকট থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। তার পরও আমরা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। এগুলো হচ্ছে কাঁচামাল সংকট, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, কন্টেইনার ও জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে আমাদের উদ্যোক্তারা ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয় ও সাপ্লাই চেইনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।’’

বৈশ্বিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমই সভাপতি বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে তেলসহ খাদ্যেও মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউপোরসহ বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাও বাড়ছে। আবার মূল্যস্ফীতি ভয়াবহভাবে বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি আমাদের জন্য একটি দুশ্চিন্তার কারণ।

“ইতোমধ্যে কয়েকজন ক্রেতা ক্রয়াদেশ দেওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন, তারা বলছেন, পরিস্থিতি আরেকটু পর্যবেক্ষণ করেই আদেশ চূড়ান্ত করবেন।”

তবে এসব চ্যালেঞ্জের পরেও চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা ফারুক হাসানের।

“২০২৫ সালে তৈরি পোশাক বাজারের ১০ শতাংশই বাংলাদেশের অধীনে চলে আসবে, যা বর্তমানে সাড়ে সাত শতাংশ রয়েছে।’’

কিভাবে এটি সম্ভব হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৭৪ শতাংশই কটন (সুতা) নির্ভর; অথচ বিশ্বের তৈরি পোশাক খাতের বাজারের মাত্র ২৫ শতাংশই কটনের। বাকি ৭৫ শতাংশই নন-কটন, যার সিংহভাগই সিনথেটিক বা ম্যান মেইড ফাইবার।

“বর্তমানে আমাদের উদ্যোক্তারা নন-কটন পোশাক তৈরিতে সক্ষম। এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন, মেশিনারিজ আমদানি করা হয়েছ। নন-কটন পোশাক তৈরিতে কারখানা স্থাপনে বিস্তৃত পরিসরে জায়গা প্রয়োজন। এখন প্রয়োজন সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা। আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের উদ্যোক্তারা পারবেন।”

নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে ৩৭তম আইএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন, তৃতীয় ঢাকা অ্যাপারেল সামিট, বাংলাদেশ পোশাক প্রদর্শনী, ডেনিম এক্সপো, সাসটেইনেবল ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড এবং ফ্যাশন ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড, ফ্যাশন ও সাংস্কৃতিক উৎসব।

সংবাদ সম্মেলনে আইএএফ’র মহাসচিব ম্যাথিয়াস ক্রিয়েটি বলেন, “এই কনভেনশনে দেড়শ ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা প্রতিটি বিষয়ে স্বচ্ছতা চান। তারা প্রতিশ্রুতি চান। এই কনভেনশনের মাধ্যমে তারা সরাসরি বাংলাদেশকে দেখতে পারবেন। বাংলাদেশও তাদের সক্ষমতা, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানগুলো তুলে ধরতে পারবে, যা তৈরি পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”

আইএএফ, বিজিএমইএ ও দেশের নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ যৌথভাবে এই কনভেনশনের আয়োজন করবে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে ‘৩৭তম আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন’ ও ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’র লোগো উন্মোচন করা হয়।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক শেহরিন সালাম ঐশী, আসিফ আশরাফ, খসরু চৌধুরী।