সয়াবিন তেল সংকট: পরিকল্পনায় ঘাটতি দেখছেন হেলাল উদ্দিন

সয়াবিন তেলের চলমান সংকটের পেছনে ব্যবসায়ীদের মজুদদারির পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2022, 08:34 PM
Updated : 7 May 2022, 08:34 PM

শনিবার ঢাকায় খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান ভোজ্যতেল সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

ব্যবসায়ীদের মজুদদারির নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে লাভের আশায়। যখন দেখা যায় যে আগামী সাত দিন পরে দামটা বাড়বে। অথচ জোর করে দামটা কমিয়ে রাখা হয়েছে। তখন হয়তো কিছু কিছু খুচরা ব্যবসায়ী সেই সুযোগ নিয়েছে। জোর করে দাম তো বেঁধে রাখা যায় না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যেটা মজুদের কথা বলছেন। মজুদ না থাকলে সে বিক্রি করবে কী? তার তো কিছু মজুদ লাগবেই।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি ও পাশের দেশে দাম বাড়ানোর পরও দেশে তেলের দাম সমন্বয় না করায় সরবরাহের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন বাড়ে, তখন ট্যারিফ কমিশনের কাছে বারবার দাম পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হলেও তারা করব, করছি করে সেটা আর করেনি। রোজার মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুরোধে ব্যবসায়ীরা আগের দামে তেল বিক্রি করেছেন। তখনো পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্য অনেক দেশে দাম বাড়তি ছিল, যোগ করেন তিনি।

হেলাল উদ্দিন বলেন, “এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই তো জানে যে তেলের দাম বাড়বে।…. এই জায়গায় সরকারি সংস্থাগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। পরিকল্পনাটা যদি আমাদের সঠিক থাকে। তাহলে এই সংকট হবে না। পরিকল্পনার সমস্যাটা হচ্ছে বাজার বাজারের জায়গায় ছেড়ে দিতে হবে। বাজার তার মতো করে আচরণ করবে। যখন যেই দাম সেই দামে বিক্রি হবে।

“সরকার, ট্যারিফ কমিশন ও অন্যান্য সংস্থাগুলো দেখবে যে, আমার আমদানিমূল্য, আন্তর্জাতিক বাজার ও আজকের খুচরা বাজারের মধ্যে মিল আছে কিনা। ব্যবসাটা ব্যবসায়ীর মত করে করতে হবে। জোর করে ব্যবসা করানো যাবে না।“

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রাণি করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

কারওয়ান বাজারের এই মুদি দোকানে নেই সয়াবিন তেল। দাম বেশি থাকায় বিক্রি বন্ধ রেখেছেন এই দোকানি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ২ শতাংশ ভ্যাট উৎসে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন সংশোধন এবং ক্ষদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে রিটার্ন সংক্রান্ত মামলা ও জরিমানা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।

অপর দাবির মধ্যে রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনকে ভেঙে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফাউন্ডেশন হিসেবে তৈরি করা।

তদারকি করে যা পেলেন হেলাল উদ্দিন

ভোজ্যতেলের সংকট শুরুর পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুরোধে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে তদারকি করে মজুদদারির দুটি যুক্তি খুঁজে পাওয়ার কথা জানান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। 

তিনি বলেন, “আমি গুলশান, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকায় দোকানে দোকানে গিয়েছি। আমি জানতে চাইছে যে তেলের সমস্যাটা কোথায়? “তারা জানালো যে ডিলাররাই কম পরিমাণ তেল দিয়েছে। লুকিয়ে রেখেছি দুইটা কারণে। যেই ক্রেতাটা গত ১০ বছর ধরে আমার দোকানে কেনাকাটা করেন তাকে তো এই সংকটের সময়ে সয়াবিন তেলটা বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্য ক্রেতাদের যদি তেল দিতে না পারি আমি বাকি ১০টা আইটেম বিক্রি করতে পারব না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। দোকানিরা চেষ্টা করেন সংকটের মুহূর্তে মালটা নিজস্ব ক্রেতাকে দিতে।“