রোজায় ইফতারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হওয়ায় দেশের বাজারে আসে নানা রকম খেজুর।
Published : 04 Apr 2022, 09:21 AM
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাত ও আকার অনুযায়ী দেশে কমপক্ষে ৩০ রকমের খেজুর বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দাম কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘জাহেদী’ খেজুরের, এটি আসে ইরাক থেকে।
রোজায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আমদানিও বাড়ে। তবে দেশের বাজারে খেজুর কিনতে গিয়ে নাম-দাম আর মান নিয়েও ধন্দে পড়েন অনেকে।
ঢাকায় ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলীতে গিয়ে দেখা যায়, মান অনুযায়ী একই জাতের খেজুরের দামে পার্থক্য রয়েছে। আবার এক জাত থেকে অন্য জাতের দামের পার্থক্য অনেক বেশি।
ইরাক থেকে আসা ‘জাহেদী’ খেজুর ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে সৌদি আরবের আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, মাশরুক, সাফাওয়ি বা কালমি, ইরান ও জর্ডানের মরিয়ম, আমিরাতের লুলু বা বরই, দাব্বাস ও নাগাল খেজুরও ভালো বিক্রি হচ্ছিল।
ইরাক থেকে আসা খেজুরটি পাইকারিতে কেজি ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারিতে আম্বার ৪০০ টাকা, আলজেরিয়ার ডাল খেজুর ৩৫০ টাকা, বাদামি রংয়ের ফরিদা ও কালমি ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মেডজুল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি।
পাইকারি এই বাজারে চার থেকে পাঁচ ধরনের মাশরুক খেজুর দেখা যায়। মান অনুযায়ী এই খেজুর ২০০-২৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাদামতলীর শাকিল ফ্রেশ ফ্রুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল হক বলেন, “আমরা মরিয়ম খেজুর ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা সেটা নিয়ে ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করে।”
তিনি বলেন, “বড় আকারের মেডজুল খেজুর কিনছেন মূলত উচ্চবিত্তরা। এটি মিশর থেকে আসে। আকারে অনেক বড় ও একদম নরম হয়। এটি পাইকারিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় এবং খুচরা দোকানে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।”
মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের খেজুর বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিম জানান, নানা ধরন থাকলেও অধিকাংশ ক্রেতা দাম বিবেচনা করেই খেজুর কিনছে।
“কাস্টমার এসে দুই-তিনটার দাম জিগায়। যেটা পুষে সেটাই নেয়। যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারা দামের পাশাপাশি খেজুরের চেহারাও দেখে। অল্প কিছু কাস্টমার নাম জিগাইয়া কিনে।”
তার ভাষ্য, কয়েক বছর আগেও কম দামের খেজুর বিক্রি হত বেশি, এখন মাঝারি মানের খেজুরের বিক্রিও বেড়েছে।
সুপারশপ স্বপ্নে লুলু ২৫০, মরিয়ম ৭৩৫, দাব্বাস ৩৬৫, মাবরুম প্রিমিয়াম ৭৬৫, আজওয়া ৮২৫, মেডজুল ১ হাজার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বপ্নের গ্রিনরোড শাখার ম্যানেজার সাব্বির হোসেন জানান, তাদের আউটলেটে মাবরুম, মরিয়ম, লুলু (বরই), দাব্বাস খেজুর বেশি চলছে।
গুলশান-২ নম্বরের ইউনিমার্টে আম্বার, মরিয়ম, আজওয়া ও মেডজুল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আজওয়া মাঝারি ৮৪৫, আজওয়া প্রিমিয়াম ১১৪৫, মেডজুল (ছোট ও মাঝারি) ১১৯৫, মেডজুল প্রিমিয়াম ১৩৯৫ টাকা, আম্বার ১২৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই আউটলেটের বিক্রয়কর্মী শরীফুল ইসলাম বলেন, “হাই-লেভেলের কাস্টমাররা প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খেজুর খোঁজেন। আমরা ১১ রকমের খেজুর রেখেছি।”
চেনার উপায়
২২ বছর ধরে ফল বিক্রি করা মিরপুরের মোহাম্মদ সেলিম জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে এত ধরনের খেজুর বিক্রি করছেন, যার অনেকগুলোর নাম তিনি নিজেও জানেন না।
এই এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীদের অবস্থাও প্রায় একই, তাদের কাছাকাছি ধরনের খেজুর পরিচিত কিছু নামেই বিক্রি করতে দেখা যায়।
খেজুর চেনা কঠিন মন্তব্য করে বাদামতলির খেজুর ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, “অনেকে সব খেজুরই সৌদির বলে বিক্রি করে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আসছে।”
এই ফল আমদানিকারক জানান, দামে অনেক কম থাকলেও দেখতে কাছাকাছি হওয়ায় অনেকে কালমিকে মরিয়ম নামে বিক্রি করছে। অথচ মাবরুম, মাশরুক, আজওয়ার মতো কালমিও সৌদি আরবের খেজুর। আর ইরানের মরিয়ম খেজুর দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসে।
বাদামতলীর বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডারে ৩০ ধরনের খেজুর বিক্রি করছেন মোতালেব সরদার। তিনি জানান, আম্বার খেজুর কালো ও খয়েরি রঙের মিশ্রণে লম্বা হয়। কালচে-খয়েরি রঙের মেডজুল খেজুর অন্যান্য খেজুরের চেয়ে আকৃতিতে বড় ও নরম হয়। আজওয়া কালো রঙের ও গোল হয়ে থাকে।
এ ছাড়া ছোট ও গোল হয় দুবাইয়ের লুলু, যেটা বাংলাদেশে বরই খেজুর বলা হয়। মদিনার মাশরুক খয়েরি রঙের হয়ে থাকে, এটি লম্বাটে হয়। মরিয়ম খেজুর খয়েরি ও কালোর সংমিশ্রণে হয়ে থাকে, কিছুটা লম্বাটে।
কালমি খেজুর কালো ও গাড় খয়েরি রঙের হয়ে থাকে। মরিয়ম ও সাফাওয়ি বা কালমি খেজুর অনেকটা একই ধরনের। মরিয়ম খেজুরের মান বেশি ভাল ও স্বাদ বেশি।
খেজুরে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, অ্যানার্জি, ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন বি, আঁশ রয়েছে। এটি রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে বলে জানান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
অনেক বেশি পুষ্টি থাকায় ইফতারের জন্য খেজুরকে একটি উপযুক্ত ফল মনে করা হয়।
তামান্না বলেন, “অনেক সময় ফল খেলে অনেকের পেট ভরে গেছে মনে হয় বা অনেকটা খেতে হয়। কিন্তু খেজুর অল্পের মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টি দেয়।
“এটি হাইড্রেড রাখে। রোজার সময় পিপাসা কমাতে সাহায্য করে। অ্যানার্জেটিকভাবে রোজা রাখতে সহায়তা করে।”
তার মতে, খেজুরের ধরনের ওপর নয়, এর আকারের উপর ক্যালরি নির্ভর করে। সেজন্য খেজুরের আকৃতি বুঝে পরিমাণ মতো খেতে হবে।
“খেজুরের আকার ছোট হলে তিনটি, মাঝারি হলে দুটি আর বড় হলে একটি খেলেই যথেষ্ট।”
ইফতারে অনেক বেশি খেজুর না রেখে ইফতার ও সেহরিতে ভাগ করে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
“ওজন বেশি হলে বা ডায়াবেটিস থাকলে খেজুর বেশি না খেয়ে পরিমিত খেতে হবে। তবে খেজুরে অ্যাসিডিটির সমস্যা না হওয়ায় নিশ্চিন্তে খাওয়া যাবে। চিনির পরিবর্তে খাবারে খেজুর যোগ করলে সেই খাবারের পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যাবে।”
এই পুষ্টিবিদের পরামর্শ, খেজুর ঢেকে রাখতে হবে, তবে ধুয়ে রাখা যাবে না। খাবার আগে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার পর দাঁতে লেগে থাকলে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।