রডের বাজারে ‘সিন্ডিকেট খুঁজতে’ অভিযানের সুপারিশ

হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রডের দামের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না ‘খুঁজে দেখতে’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ  করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2022, 11:56 AM
Updated : 23 March 2022, 12:55 PM

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় এই কমিটির বৈঠকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনায় এ সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে গেল, কেন? এতে করে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

“কমিটি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে  অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলেছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না সেটা খুঁজে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে।”

আগামী সাত দিনের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের দাম প্রতি টন ৮১ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, দেশের ইতিহাসে যা তখন রেকর্ড দাম ছিল।

ঠিকাদাররা বলছেন, গত নয় মাস আগে যেখানে রডের দাম প্রতি টনে ৬২ হাজার টাকা ছিল, এখন তা ৯২ হাজার টাকা হয়েছে। এ জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন উৎপাদনকারীরা।

‘লজ্জাজনক’ কাজ করেছেন ব্যবসায়ীরা

বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে আলোচনায় আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, “ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে লজ্জাজনক কাজ করেছেন। পুরো দেশবাসীকে লজ্জায় ফেলেছে। দেশবাসী এই লজ্জা থেকে পরিত্রাণ চায়।

“সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে তেলের দাম কমিয়েছে। ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়েছে। টিসিবি মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে।”

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে অস্থির হতে শুরু করে সয়াবিন তেলের বাজার। সেসময় ব্যবসায়ীদের অনুরোধে সরকার এক দফা দাম বাড়ানোর পরও বাজারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে ভোজ্যতেল।  

গত ৬ ফেব্রুয়ারি আলোচনার ভিত্তিতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খোলা তেলের মূল্য বেঁধে দেওয়া হয় প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা।

এর ২০ দিনের মাথায় আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলে তাতে সায় দেয়নি সরকার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে মার্চের শুরু থেকে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহ সংকটও তৈরি হয়।

আড়তদার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল গেইট থেকে তেল সরবরাহ না দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। তখন সরকার নির্ধারিত আগের দামের চেয়ে লিটারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়।

কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর রাজধানীর আগারগাঁয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনের পাশে টিসিবির ট্রাক থেকে তেল, ডাল, চিনি কিনে ফিরছেন এক ব্যক্তি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় খোলা সয়াবিন তেল অনেক জায়গায় মিলছিল না বলে খবর আসে। অনেক বাজারে তেলের বোতল খুলে খুচরায় খোলা আকারে প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

এই পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান পরিচালনাসহ তেল মজুদের জন্য জরিমানা করা হয় ব্যবসায়ীদের। তেল সরবরাহ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সরবরাহ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তেল পরিশোধনকারী বিভিন্ন কারখানাতেও যান ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা। এসব উদ্যোগে সরবরাহ সংকট কমে আসলে দামও কিছুটা কমে। তবে তা আগের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিই থাকে।

পরবর্তীতে দেশের বাজার পরিস্থিতি ও আন্তজার্তিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে দাম কমানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার ভোজ্যতেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিক্রয় পর্যায় ৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেয়।

ঢাকার তোপখানা রোডে বুধবার টিসিবির ট্রাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সর্বশেষ গত ২০ মার্চ এক লিটারের বোতলের নতুন দাম ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর খোলা তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়ে ১৩৬ টাকা লিটার।

বৈঠকে টিসিবির আপৎকালীন মজুদ সক্ষমতা এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নেওয়া পদক্ষেপ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে টিসিবির পণ্য সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “দুর্বল টিসিবি দিয়ে বড় কাজ করা যায় না। তাদের আরও বাজেটের প্রয়োজন। প্রতি বিভাগে গুদাম প্রয়োজন।

“আমরা এই কাজের জন্য টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছি। আমরা আরও বলেছি, টেন্ডারের মাধ্যমে পণ্য না কিনে সরকারি আমদানিকারকদের কাছ থেকে যাতে টিসিবি যাতে মাল কেনে, না হলে টেন্ডারে একটা সিন্ডিকেট হয়।”

কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং মুহিবুর রহমান মানিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।