শনিবার বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত ঢাকা-টরন্টো রুটের টিকিট’ বলে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার এয়ারলাইন্সটির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায় ওই ফ্লাইটের (বিজি ৩০৫) সব টিকিট ‘সোল্ড আউট’।
এমনকি ‘পরীক্ষামূলক এ বাণিজ্যিক ফ্লাইটে’ কানাডার টরন্টো থেকে ফিরতি টিকিটও সাধারণ যাত্রীদের জন্য নয় বলে কল সেন্টার থেকে জানানো হয়।
তাহলে ওই ফ্লাইটে কারা যাতায়াত করবেন তা বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শনিবার রাতে এ বিষয়ে যোগাযোগের কয়েক ঘণ্টা আগে তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত ঢাকা-টরন্টো রুটের টিকিট’।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে কানাডার টরন্টো রুটে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করছে। ১৯ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ০৫টা থেকে ঢাকা-টরন্টো রুটের টিকেট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।”
এতে বলা হয়, অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে এ ফ্লাইট চালানো হবে। যাত্রীরা বিমানের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট www.biman-airlines.com থেকে এ রুটের টিকিট কিনতে পারবেন।
এছাড়াও বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার, বিমান কল সেন্টার এবং বিমান অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কেনা যাবে।
কানাডা থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে আসতে চান তারা বিমানের ওয়েবসাইট থেকে অথবা বাংলাদেশে অবস্থিত বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার বা অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকিট কিনতে পারবেন।
ফ্লাইটটির সূচি তুলে ধরে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট বিজি৩০৫ কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সোয়া সাতটায় সেখানে অবতরণ করবে।
টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট (বিজি৩০৬) আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ৩০ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকায় নামবে।
তবে শনিবার সন্ধ্যায় বিমানের কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করা হলে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ওই ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, ওই টিকিট ‘সাধারণ যাত্রীদের জন্য’ নয়।
ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট কাটা যাবে কি না জানতে চাওয়া হলেও কল সেন্টারের প্রতিনিধি জানান, ওই ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির কোনও নির্দেশনা তারা পাননি।
যাত্রী কারা
‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইটের’ টিকিট সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি না করে এবং ‘বিক্রি শেষ’ বলে ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য মেলেনি বিমান বাংলাদেশের। এমনকি ওই ফ্লাইটের যাত্রী কারা তা নিয়েও কথা বলেননি এয়ারলাইন্সটির জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা।
তবে গত ৭ মার্চ বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক দাপ্তরিক চিঠিতে জানানো হয়, ওই ফ্লাইটে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, একজন উপসচিব, বিমান বাংলাদেশের পরিচালক, মন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই ফ্লাইটের যাত্রী হচ্ছেন।
‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইটের টিকিট’ বিক্রির ঘোষণা দিয়েও তা সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি না করা প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এভিয়েশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষামূলক যাত্রার ক্ষেত্রে সাধারণত কর্মকর্তারা থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরাও যাত্রী হন কখনও। এসবের পাশাপাশি বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স যাত্রীদেরও নেয়।
“কারণ যাত্রী থাকলে তো সমস্যার কোনও কারণ দেখি না। এতবড় একটা এয়ারক্রাফট, ওর যাতায়াত খরচ তো অনেক। সব যাত্রী যদি ফ্রি নিয়ে যায় তাহলে… বিমানের এই লসটা কে পোষাবে, এই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।“
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিমানের এ পরীক্ষামূলক বলতে কীসের পরীক্ষা… পাইলটের পরীক্ষা, কেবিন ক্রুর পরীক্ষা? আর বাণিজ্যিক বলতেই তো টিকিট বিক্রি করে রাজস্ব আয়ের বিষয়টি আসে।
“আমি যদি এটাকে অ্যামেচার বলি, জয় রাইড মিশনের মত কোনো কিছু নিজেদের লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনার মত… সেটা হতে পারে। তবে যখন বাণিজ্যিক বলব, তখন অবশ্যই রাজস্ব আয়ের বিষয়টি আসে। আর এত লম্বা একটা রুটে জয় রাইড হতে পারে কি না সেটাও তো একটা বিষয়।“