আগামী রোববার থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ‘এক কোটি পরিবারের’ এসব মানুষের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরশেন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
এ তালিকা করা হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীকালীন নগদ সহায়তা পাওয়া ৩০ লাখ পরিবারের সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনসংখ্যার দারিদ্রতার সূচক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তবে ঢাকা ও বরিশাল নগরীতে কার্ড দেওয়া যায়নি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর টিসিবি ভবনে রমজান উপলক্ষে নিম্ন আয়ের ‘এক কোটি পরিবারের জন্য টিসিবির পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম’ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজমন্ত্রী টিপু মুনশি ইতোমধ্যে সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবারের মধ্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি করতে ‘ফ্যামেলি কার্ড’ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
করোনাকালীন সময়ে ৩০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তার ডাটাবেইজের সঙ্গে এই ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবার নতুন যোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, “এক কোটি কার্ড মানে এতে অন্তত প্রতি পরিবারে ৫ জন করে যোগ করলে পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এ সুযোগ পাবে। পরবর্তিতে যদি এই কার্ড স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং যদি আমরা চালিয়ে যাই, প্রধানমন্ত্রী সেভাবে নির্দেশ দেবেন সামনের দিনগুলোতে একই প্রক্রিয়া যাব।”
ঢাকা ও বরিশাল নগরীতে কার্ড দিতে না পারার কারণ জানাননি মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা ঢাকা ও বরিশালে দিতে পারেনি, ঢাকা ও বরিশালে যেভাবে ছিল সেভাবেই আমরা দিব। দরকার হলে নাম্বার মেইনটেন করব। ঢাকার পাশাপাশি বরিশালেও একই ব্যবস্থায় দেওয়া হবে।“
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান জানান, রমজানের আগে ও রমজানের মধ্যে দুই দফা এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে কার্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে।
আগামী রোববার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজার আগে প্রথম পর্বে সয়াবিন তেল, চিনি, মশুর ডাল বিক্রি করা হবে।
এরপর রোজা শুরু হলে ৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ওই তিন পণ্যের পাশাপাশি ছোলাও বিক্রি করা হবে বলে জানান টিসিবির চেয়ারম্যান।
এছাড়া ঢাকায় এসব পণ্যের সঙ্গে খেজুরও বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
'উপকারভোগী' পরিবারের মধ্যে প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হবে। এছাড়া ২ কেজি করে ছোলা পাবেন, ৫০ টাকা দরে।
তিনি জানান, টিসিবির পণ্য সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে অথরাইজড অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “টিসিবির জন্য এক কোটি চাপটা অনেক বেশি। ক্ষমতার অনেকগুণ দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তারপরও সেটা কাভার করতে পেরেছে। তারা সেটা পারবে।”
যারা সত্যিকার অর্থে টিসিবি পণ্য পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় ১২ লাখকে আগের প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে।
“এর বাইরে আমরা ঠিক করেছি যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে যতবেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। এর বাইরে যাতে কেউ সুযোগ না দিতে পারে।”
ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “আগেই বলে দেওয়া হবে কোথায় ট্রাক থাকবে। সেখানে কোন কোন কার্ড হোল্ডার থাকবেন তাও আগে থেকে বলে দেওয়া হবে। শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় ছুটির দিন শুক্রবার ট্রাক যাওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে জানিয়ে রোজার শুরুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনা থেকে বিতর থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন।