দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: টাস্কফোর্স আসছে, বাড়ছে তদারকি

নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট-শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে দুই একদিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2022, 02:38 PM
Updated : 13 March 2022, 03:47 PM

পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া বন্ধে টাস্কফোর্স কাজ করবে জানিয়ে তিনি অস্বাভাবিক দাম নেওয়া বন্ধে প্রয়োজন অনুযায়ী ‘অ্যাকশনে’ যাওয়া ও তদারকি বাড়ানো এবং অবৈধ মজুত বন্ধে ‘হস্তক্ষেপ’ করার কথাও জানান।

রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে করণীয় বিষয়ে পাঁচ মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানান তিনি।

রোববার বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। এতে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অংশ নেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশে ওএমএসের কার্যক্রম এবং টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো, নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানানো হয়।

সোমবারের মধ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলের ভ্যাট কমানোর প্রজ্ঞাপনও হবে বলে সাংবাদিকদের জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই, এই (দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি) সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধুতা যেন প্রশ্রয় না পায়।

“এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে...। আমরা দু-একদিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করব, যাতে কেউ সুযোগটা না নিতে পারে।“

মূল্য কোনটা হওয়া উচিত তা সরকার ‘অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে’ বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর উপরে যারা চেষ্টা করছেন, “তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা অ্যাকশনে যাব।“

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে যেখানে এই (অবৈধ মজুত) প্রচেষ্টা করা হবে, সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করব।

“এমন না যে আজকে দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়িয়েছে, আসলে তারা আগের হিসাব ধরে বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা সেটা বন্ধ করব।“

বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেন।

আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিত্যপণ্যের মজুদ নিয়ন্ত্রণসহ ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ওএমএস কার্যক্রম ও পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো এবং মজুদ নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“ভোজ্যতেল, চিনির উপর কতখানি কমানো যায়, আমরা শিগগিরই একটা ঘোষণা দেব।“

বিশ্বজুড়েই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিদিনই দেখছি দাম বাড়ছে। সেটার প্রভাব আমাদের দেশেও আসছে। আমাদের দেশে যেটা আসছে আপনারা লক্ষ্য করছেন। রোজার মধ্যে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বাড়তে পারে-সেটা মাথায় রেখে আজকে আমরা বসছিলাম।”

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে জ্বালানির সরবরাহ, গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমছে। সেটা সারা বিশ্বেই কমছে।

“আমাদের বাংলাদেশও সেইখানে এফেকটেড হচ্ছে কিংবা হবে। গমের সাপ্লাই- যেহেতু ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসত, সেইখানেও আমরা একটা অসুবিধায় পড়তে পারি, দাম বৃদ্ধি করতে পারে। কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব কিংবা একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারব, সেজন্য আজকের সভাটি হয়েছে।“  

এখন থেকেই ওএমএসের কার্যক্রম বাড়ানো হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যাতে ন্যায্যমূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে পারি। দ্রব্যের যে সাপ্লাই চেইন সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব, কোনোখানে খাদ্যদ্রব্য কিংবা এসেনসিয়াল পণ্যের সাপ্লাই চেইন যাতে ঠিক থাকে।

“প্রোডাক্ট স্টক যে যেখানেই রাখেন সেই স্টকটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করব, কেউ যেন স্টক বেশি রেখে মজুত বেশি করে দ্রব্যমূল্য না বাড়াতে পারে।“

একইসঙ্গে সরবরাহ ও মজুতের উৎস নজরদারিতে রেখে যেকোনো উপায়ে যাতে দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো না হয় তা তদারকির কথাও বলেন তিনি।