সরকারের হুঁশিয়ারির পর কমছে ভোজ্যতেলের দাম

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কড়া হুঁশিয়ারি ও সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্য তেলের দাম, যদিও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এখনও তা আসেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2022, 09:06 AM
Updated : 11 March 2022, 12:07 PM

গত দুই সপ্তাহ ধরে ভোজ্য তেলের মূল্য ছিল চড়া, শুক্রবার দাম খানিকট কমে আসায় বাজারে এসে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর মিরপুর, বড়বাগ, পীরেরবাগসহ বিভিন্ন বাজারে সুপার পাম তেল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, আর লিটার ১৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলে ভরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

পীরেরবাগের মুদি দোকানি শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত সোমবারও দাম অনেক বেশি ছিল। সয়াবিন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা হয়ে গিয়েছিল। আর পাম তেলের দাম উঠেছিল লিটার ১৭০ টাকা।

“এখন পাইকারিতে দাম কমেছে। তাই আমরাও কমাতে পেরেছি।”

আমদানি মূল্য ও বাজার বিশ্লেষণ করে সরকার গত ৬ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা এবং পাম সুপার তেল ১৩৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

কিন্তু বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল খোলা সয়াবিন তেলের দাম। এর কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে বাজারে নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে বৃহস্পতিবার সয়াবিনে ২৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, “জিনিসের দাম যাতে সহনীয় থাকে, সেজন্য আজকে যেসব আইটেমের ওপর ভ্যাট ছিল সেগুলো তুলে নিয়েছি। সরকার থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা করা দরকার সেটা করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে উপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

বর্তমান বাজারে সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬৮ টাকা। ঘোষিত হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে প্রতি লিটারে দাম ৩০ টাকার মত কমতে পারে বলে ধারণা দেন সয়াবিন তেল আমদানিকারক অন্যতম কোম্পানি সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা।

এ ছাড়া মার্চ মাস থেকেই সয়াবিন তেল বোতলজাত করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ, খোলা অবস্থায় কোনো সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না।

এদিকে বাজারে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ও ‘কারসাজি’ থামাতে শুক্রবার থেকেই মুদি দোকানিদের কাছে পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সবজির বাজার চড়া

শীত মওসুমে শাক-সবজির বাজার ছিল চড়া, আর গরমের শুরুতে তা যেন আরও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আবাদি ক্ষেতগুলো ‘অবসরে যাওয়ায়’ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।

শুক্রবার পীরেরবাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকায়। একইভাবে বরবটি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, খিরা ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, টমেটো ৫০/৬০ টাকা, ব্রকলি ৪০ টাকা, মুলা/শালগম ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে করলা, ঢেঁড়শ, কাচামরিচ ও লাউসহ আরও কয়েকটি সবজি কেজিতে ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

আবিদুল করিম নামের একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, “এখন শীত মওসুমের সবজি ক্ষেতে সবজি শেষের দিকে, নতুন মওসুমের সবজির চাষাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এক কথায়, বলতে গেলে মওসুম শেষ। তাই কিছু কিছু সবজির দাম বাড়ছে।”

এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৪৫ টাকা এবং সোনালি মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ২৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস ধরে গরুর মাংস কেজিতে ৫০ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক বছরের হিসাবে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা।

মোটা মসুর ডালের দাম দুই মাসে কেজিতে ৩০ টাকা করে বাড়লেও মাঝারি দানার দাম কিছুটা কমেছে। মোটা মসুর ডাল ও মাঝারি মসুর ডাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। যদিও একমাস আগে খুচরায় মাঝারি মসুর ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি হত।

আরও খবর: