আলেশা মার্টের কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩০০ কোটি টাকা

আগাম অর্থ নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ই-কমার্স কোম্পানি আলেশা মার্টের কাছে গ্রাহকের পাওনা  দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2022, 01:45 PM
Updated : 17 Feb 2022, 01:49 PM

প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কার্যত বন্ধ হয়ে থাকা এই কোম্পানিটি নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গ্রাহকের এই পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক পর্যালোচনা সভায় আলেশা মার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মঞ্জুর আলম শিকদার সাংবাদিকদের কাছে এই পরিকল্পনার কথা জানান।

“গত জুলাইয়ে ঝামেলা শুরুর পর ৩০০ কোটি টাকার মতো একটা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল। এরই মধ্যে আমরা গ্রাহকের ১৩ কোটি টাকার মতো ফেরত দিয়েছি। এখন পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে যাচ্ছে আরও ৪২ কোটি টাকা।”

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ৪২ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

মঞ্জুর আলম বলেন, “আমার ধারণা আমাকে আরও ২৩০ কোটি টাকার মতো কোনো না কোনোভাবে বা আমার অন্যান্য যেসব কোম্পানি আছে সেখান থেকে কিংবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ফেরত দিতে হবে।

“আমাদের ব্যাংকিং ট্রানজেকশন ভেরি গুড। আশা করছি খুব সহসাই আমরা এটা সমাধান করে ফেলতে পারব। আগামী জুনের মধ্যে সব টাকা পরিশোধ করে দেব।”

তবে অল্প সময়ের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়ে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কোনো ব্যাংক ঋণ দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়

দেশে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের অবস্থা তুলে ধরে আলেশা মার্টের সিইও মঞ্জুর আলম বলেন, “অসুস্থ একটা প্রতিযোগিতা ছিল ই-কমার্সে। কেউ ১০ শতাংশ দিলে আরেকজন ১২ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে।

“আমরা চেয়েছিলাম নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী একটা মূল্যছাড় দিতে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে কিছু কিছু কোম্পানি টাকা কালেকশনের জন্য মূল্যছাড় কৌশলকে ব্যবহার করেছে।”

নিজের কোম্পানির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা একটা গ্রুপ অব কোম্পানি। আমাদের একটা কৌশল ছিল। আমরা চেয়েছিলাম নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্যের মূল্যছাড়ের পেছনে কিছু টাকা বিনিয়োগ করব।

“এর বিপরীতে একটা শক্ত গ্রাহক শ্রেণি তৈরি হবে। এবং বাস্তবে তাই হয়েছিল। তিন মাসের মধ্যে ১৭ লাখ গ্রাহক তৈরি হয়েছিল। এর মানে হচ্ছে ডিজিটাল কমার্স বাংলাদেশের ফিউচার।”

মঞ্জুর আলম বলেন, “আমাদের ক্যাশ টাকা ছিল না, তাই দিতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অ্যাসেট আছে, রেভিনিউ স্ট্রাকচার আছে। এই টাকা ফেরত দেওয়ার ক্যাপাসিটি আছে।”

গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে দীর্ঘ সময় পরও পণ্য না দেওয়া, অর্থ ফেরত না দেওয়াসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে আলোচনা শুরু হয়।

পরবর্তীতে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ না করে অফিস বন্ধ করে দেওয়া ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ ও দালাল প্লাস এর পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকায় গত ডিসেম্বরে যুক্ত হয় আলেশামার্ট।

পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে টাকা পাচ্ছেন গ্রাহক

আলেশা মার্টের কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’তে আটকে থাকা ৪২ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছে ফেরত যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনলাইনে পেমেন্ট সেবাদাতা প্ল্যাটফর্ম এসএসএল কমার্স এবং আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে ১০ জন গ্রাহকের পাওনা ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “জুলাই পর্যন্ত ৪২ কোটি টাকার মতো জমা হয়েছে পেমেন্ট গেটওয়েতে। এর আগে জুন পর্যন্ত সময়ে কম বেশি (প্লাস-মাইনাস) ৩২ কোটি টাকার মতো আটকা ছিল।

“আপাতত জুন থেকে জুলাই (ই-কমার্স নীতিমালা প্রকাশের পরবর্তী সময়ে) অংশের ৪৮৫ জন গ্রাহকের ১০ কোটি টাকা প্রথম ধাপের মধ্যে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি জানান, চলতি সপ্তাহে এটা সম্পন্ন করা হবে। আর জুলাইয়ের আগের সময়ে যারা ৩২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন, তাদের তালিকা বৃহস্পতিবার রাতেই প্রকাশ করবে আলেশামার্ট। আগামী সপ্তাহে সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

টাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “আমরা চাই, যে টাকা ফেরতযোগ্য, উদ্ধার করা যাবে, সেই টাকাগুলো যেন গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়।

“আইন যিনি ভঙ্গ করবেন তিনি ব্যবসায়ী বা যেই হোক তার বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেওয়া যায় সেটি দেখছি।”