সোমবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছয় হাজার ৭২১ জন গ্রাহকের ক্রয়াদেশের বিপরীতে ৫৯ কোটি টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার পর প্রথম দফায় ২০ জন গ্রাহক তাদের টাকা বুঝে পেলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠানে বলেন, “২০ জন গ্রাহক ৪০ লাখ ২ হাজার ৪১৩ টাকা ফেরত পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ভোক্তাদের অর্থ ফেরতের কার্যক্রম উদ্বোধন করলাম।"
এই অর্থ পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের কাছে আটকে ছিল। কিউকমের মতই নানা অভিযোগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে এই পেমেন্ট গেটওয়ের অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালি, কিউকমসহ অনেকগুলো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম হিসেবে নিয়েও পণ্য না দেওয়ার অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।
এরপর একে একে অনেকগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী। এতে কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যায়, গ্রাহকরাও আর টাকা পাননি।
সম্প্রতি কিউকম ও তাদের পেমেন্ট যোগযোগী ফস্টার কর্তৃপক্ষ আলোচনার পর গ্রাহকদের একাংশের ছয় হাজার ৭২১টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে ৫৯ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৪৭ টাকা আটকার বিষয়ে একমত হয়।
এসব ক্রয়াদেশের পণ্যগুলো গ্রাহকের কাছে সরবরাহ না করায় এই টাকা গ্রাহককে ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করে কিউকম। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই অর্থ ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়।
এর বাইরে কিউকমের কাছে গ্রাহকের আরও অন্তত ২০০ কোটি টাকা আটকা আছে, যা ফেরতের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, “ভোক্তারা যে টাকা ফেরত পাননি বা পণ্য বুঝে পাননি সে অর্থ তারা ফেরত চাচ্ছিলেন। কিন্তু যেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা ছিল সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিলাম।
“তারা মতামত দিয়েছিল, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং মালিক জেলে আছেন, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও মামলা নেই, তাদের মধ্যে একটি কিউকম।”
তিনি বলেন, "ফস্টার পেমেন্টের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার বিষয় ছিল। তবে ফস্টারের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযোগ ছিল, সেজন্য এনওসি নিয়ে এসেছি।
“বাংলাদেশ ব্যাংকও এটি নিয়ে কাজ করেছে। আপাতত ৫৯ কোটি টাকার বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়েছে, যেখানে ৬ হাজার ৭২১ জনের লেনদেনের বিষয় রয়েছে।"
সচিব বলেন, এসব ক্রেতা অগ্রিম টাকা দিলেও পণ্য পাননি। তাদের ৫৯ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
“এদের মধ্যে ২০ জনের অর্থ আজ ফেরত দেওয়া হল। বাকিদের টাকা ফেরতের জন্য কাজ করছি।”
‘ই-কমার্সের আস্থা ফিরবে’
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে আগামীতে কোম্পানিগুলোর ইউনিক বিজনেস আইডি (ইউবিআইডি) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শিগগিরই তা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
তিনি বলেন, “কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর একটি ইউনিক আইডি নম্বর থাকবে এবং এটার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেই কাজ শেষের দিকে। আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে এটা শুরু করতে পারব।”
ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার অনুষ্ঠানে বলেন, কিউকমের ২০ জন গ্রাহক টাকা ফেরত পাওয়ায় আস্থার সঙ্কট কিছুটা হলেও কাটবে বলে মনে করেন তিনি।
“আজকে আমাদের একটা গোল্ডেন মোমেন্ট। যখন আমরা একটা সমস্যার সমাধান করি, তখন একটি অনেস্ট উইং দরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সেটা রয়েছে।
“আমরা মনে করি, ভূঁইফোড় কিংবা ডিজঅনেস্টিতে ব্যবসা করে খুব অল্প সংখ্যক। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা যারা প্যানডেমিকে কাজ করেছে, তারা সততা নিয়ে ডিজিটাল ব্যবসায় এসেছে, এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা “
শমী কায়সার বলেন, যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলছে; যেখানে মানি লন্ডারিং হয়েছে, সেখানেও তারা ছাড় পাচ্ছে না।
“ভোক্তারা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকারটা পায়। তারা যেন তাদের অর্থ ফেরত পায় সেজন্য যে কাজটি হল সেটি একটি মহৎ উদ্যোগ। এর অংশ হিসাবে আজকে যে যাত্রা শুরু হয়েছে, এটি একটি শুভ যাত্রা। এটি আবারও ই-কসার্ম সেক্টরে আস্থা ফিরে পেতে সাহায্য করবে।”
আরও পড়ুন