প্রণোদনা ঋণ পরিশোধে এবার সময় চায় বিকেএমইএ

কোভিড মহামারীর সঙ্কট মোকাবেলায় রপ্তানিমুখী শিল্পের বেতনভাতা বাবদ সরকারের দেওয়া স্বল্প সুদের ঋণ পরিশোধে এবার সময় চেয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিকেএমইএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2022, 05:47 PM
Updated : 8 Jan 2022, 05:47 PM

এতদিন রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ১৮ মাসের কিস্তির সময় বাড়িয়ে ৩৬ মাস করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

কোভিডের ধাক্কা সামলাতে ২০২০ সালের এপ্রিলে দেওয়া প্রণোদনার এ ঋণের ইতোমধ্যে চার কিস্তি পরিশোধ হয়ে যাওয়ায় এখন বাকি আছে ১৪ কিস্তি।

এ ঋণ পরিশোধে ৪২ মাস সময় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান।

গত ৪ জানুয়ারি পাঠানো ওই আবেদনের অনুলিপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকেও পাঠানো হয়েছে।

শ্রমিকের চার মাসের বেতন-ভাতা বাবদ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ শুরু হয় ২০২০ সালের এপ্রিলে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড ধরে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তা পরিশোধের কথা থাকলেও সরকার আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেয়।

এর ফলে ২০২১ সালের শুরুতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়টা ভালোভাবেই কাটিয়ে ওঠেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এখন মহামারীর তৃতীয় একটি ঢেউয়ের আভাসের মধ্যেই নতুন করে সুবিধা চাওয়া শুরু হল।

চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি হয় মাত্র ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

সরকারের নীতি সহায়তার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করা গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকে কারখানাগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করে।

কিন্তু উদ্যোক্তারা পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল- তুলা, সুতা, ডাইস কেমিক্যালসহ অন্যান্য কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন বলে জানান বিকেএমইএ সভাপতি।

চিঠিতে আন্তর্জাতিকভাবে কনটেইনারের অপ্রতুলতা এবং ভাড়া বেড়ে ‘আকাশচুম্বি’ হয়ে যাওয়াকে সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।

এছাড়া কাঁচামালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের বাজার থেকে বেশি পরিমাণে তুলা সংগ্রহের কারণে তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ বহগুণ বেড়ে গেছে বলেও জানানো হয়।

বিকেএমইএ সভাপতি চিঠিতে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং নিট পোশাকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।

এই প্রবৃদ্ধির পেছনে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া মূলত ভূমিকা রেখেছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

বিকেএমইএর আরও কিছু দাবি

চিঠিতে বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে আরও বেশ কিছু দাবি জানানো হয়েছে-

>> বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত নিট কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সর্বোচ্চ সীমা ৩০ মিলিয়ন ডলারে বর্ধিত করা। কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি করা হলেও তার বিপরীতে ক্রেতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ না পাওয়ায় তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে।

>> বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর জন্য ইডিএফের সীমা ২০ মিলিয়ন ডলার থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। কোনো নিট কারখানার ইডিএফ থেকে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তহবিল প্রয়োজন হলে কেসভিত্তিতে সমাধান করা।

>> ইডিএফ ফান্ডের আকার ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে আরও বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

>> নন-বন্ডেড তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন গাইড লাইন-২০১৮ সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

>> সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বাড়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণ সীমা (ব্যাক টু ব্যাক ক্রেডিট লিমিট) ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।

>> বস্তুমূল্যের পরিবর্তে সরাসরি প্রত্যাবাসিত ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা-সংবলিত নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নের ক্ষেত্রে এলসি করার অনুমোদন দিয়ে স্থানীয় শিল্পের বিকাশে সহায়তা দেওয়া এবং তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।

আরও পড়ুন: