বাংলাদেশ সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের আলোচনায় বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি আসে।
স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ তাদের স্বাগত জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষাতের সময় দুই রাষ্ট্রপতি দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এ সময় তারা এ ব্যাপারে দুই দেশেরই যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।”
ভারতকে বাংলাদেশের ‘খুব কাছের ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
“দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ‘মৈত্রী উৎসব’ পালন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশে ও ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণ একে অপরের ইতিহাস আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।”
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নে কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। দুদেশ একযোগে কাজ করলে এ বিষয়টি আরো ত্বরান্বিত হবে।
দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে বর্ণনা করেন কোবিন্দ। তিনি বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বড় টেস্টিমনি’।
“দুদেশের সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক।”
বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং প্রকল্প সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। তিনি বলেন, দুদেশের বাণিজ্য যাতে আরও বাড়ে, সে ব্যাপারে তার দেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাস সরকারসহ দুই দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২১ যুদ্ধ্ববিমানের রেপ্লিকা রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেন।
পরে তিনি বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন এবং তার সম্মানে রাষ্ট্রপতি হামিদের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এবং সরকারি পদস্থ কর্মকর্তারা নৈশভোজে যোগ দেন।
নৈশভোজের আগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন অতিথিরা।