টয়োটা-নিশানের বাজারে এগোতে পারবে বাংলা কারস?

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শোরুমে রাখা আছে সাত আসনের একটি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি), যেটির ব্র্যান্ড নেইম ‘বাংলা’। নারায়ণগঞ্জে তৈরি এ মডেলের শতাধিক গাড়ি ইতোমধ্যে নেমেছে সড়কে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2021, 05:48 PM
Updated : 4 Dec 2021, 06:21 PM

নিজেদের একটি গাড়ির ব্র্যান্ড তৈরির আকাঙ্ক্ষা আর পাঁচ বছরের চেষ্টা ও শত কোটি টাকা বিনিয়োগের ফসল ‘বাংলা কারস লিমিটেডের’ ‘বাংলা’ নামের এ গাড়ি।

স্বল্প দামে টয়োটা, হোন্ডা, মিতসুবিশি কিংবা নিশানের মতো ব্র্যান্ডের পাশে দেশি নাম যুক্ত করার এ উদ্যোগের পেছনের ব্যক্তি জাকির হোসেন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা।

চার চাকার বাহন তৈরি করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর গৌরব অর্জনের পথে তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারই পারবারিক প্রতিষ্ঠান হোসেন গ্রুপ। গড়ে তুলেছে সহযোগী কোম্পানি ‘বাংলা কারস লিমিটেড’, যেটি ‘বাংলা’ ব্র্যান্ডের এসইউভি দিয়েছে শুরু করেছে যাত্রা।

হোসেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ‘বাংলা কার’ এরও প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তরুণ এ উদ্যোক্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৭ লাখ ও ৩২ লাখ টাকায় সাত সিটের ১৫০০ সিসির যে এসইউভি গাড়িগুলো রাস্তায় নামিয়েছি, সেখানে কোটি টাকার গাড়ির সুবিধা রাখা হয়েছে।

“একই সুযোগ-সুবিধায় টয়োটা কোম্পানির গাড়িগুলোর মূল্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা।”

ইন্দোনেশিয়া ও চীনের দুটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ- ডংফেংসোকন কোম্পানি লিমিটেড (ডিএফএসকে) এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের কারখানায় গাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে কোম্পানিটির দাবি।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা যন্ত্রাংশ দিয়ে সংযোজনের মাধ্যমে ১১৪টি গাড়ি উৎপাদনের পর তা ক্রেতাদের হাতেও পৌঁছে দেওয়ার দাবি করেছেন তরুণ এ উদ্যোক্তা।

প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে নিজেদের ব্র্যান্ডের নামে গাড়ি সংযোজন করে বাজারজাত শুরু করলেও পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে কিছু যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি এবং নিজেদের নকশায় গাড়ি তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য আর অগ্রগতির কথা তুলে ধরে ‘বাংলা কারস’ এর তরুণ এ প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “আমরা অন্য একটি বিদেশি কোম্পানির ডিলার-ডিস্ট্রিবিউটর হতে চাইনি।

“অ্যাসেম্বলিং তো অনেকেই করে; আমরা চেয়েছি নিজস্ব প্রচেষ্টায়, নিজস্ব ডিজাইন ও দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি নতুন নামে উৎপাদন করতে, যাতে মেইড ইন বাংলাদেশের গৌরব যুক্ত থাকে।”

তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, “ক্রেতাদের কাছে কীভাবে দেশের নামে, দেশীয় একটি ব্রান্ডের গাড়ির গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা যায়, সে চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা ৪-৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি।“

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলা কারসের শোরুমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি এসইউভি গাড়ি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব?

বাজারে জাপান, ইউরোপসহ উন্নত দেশের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো নতুন সব প্রযুক্তি সংযোজন করছে, সেইসঙ্গে কমছে দামও। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় সব যন্ত্রাংশই আমদানিনির্ভর রেখে কীভাবে একটি ব্র্যান্ড দাঁড় করানো সম্ভব?

এমন প্রশ্নে জাকির হোসেনের উত্তর, “কাজটি যে অনেক কঠিন সেটা আমরা গত পাঁচ বছরে বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, তাদের পরামর্শ চাইতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি।“

তিনি জানান, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছেন। তবে এখন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে গাড়ি উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করেছেন।

“সবাই আমাদেরকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমরা গাড়ি নির্মাণ করে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা চাচ্ছি সুলভ মূল্যে বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের পণ্যটি দেশীয় ব্রান্ডের নামে ক্রেতার হাতে তুলে দিতে।”

 তিনি জানান, ‘বাংলা কারস’ এর তৈরি গাড়িতে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চিয়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্ত থাকছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর গৌরব।

একটি আধুনিক এসইউভি গাড়িতে যে ধরনের ফিচার থাকার কথা সেগুলোর প্রায় সব রয়েছে বাংলা কারস এর তৈরি এসইউভি গাড়িতে। তবে নামিদামি ব্র্যান্ডের এ মডেলের গাড়ির দামের তুলনায় এর দাম অনেক কম। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দেশে গাড়ি আর বানাচ্ছে কারা?

দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজই সবচেয়ে বড় ও পুরোনো গাড়ি সংযোজনকারী কোম্পানি। কয়েক বছরের চেষ্টায় পিএইচপি গ্রুপও প্রোটনের সেডান মডেলের গাড়ি সংযোজন করছে। এর বাইরে ইফাদ অটোস ভারতের অশোক লিল্যান্ডের বাস ও ট্রাক সংযোজনের কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

এছাড়া জাপানি কোম্পানি হন্ডা, মিতসুবিশি বাংলাদেশে গাড়ি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী পুষ্পেশ্বর সিংহ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্প এখন ব্যাপক। এখানে যদি মাস্টারপ্লান নিয়ে কাজ করা যায় তাহলে গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং করা সম্ভব।

এজন্য একটি কোম্পানির অন্তত ১০ বছরের প্রস্তুতি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি গাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫ হাজার পর্যন্ত যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। এসব পার্টস যদি বাংলাদেশে করতে হয় সেটা রাতারাতি সম্ভব নয়। আবার বেশি পরিমাণ উৎপাদন না করতে পারলে লাভজনক হবে না।

“একটা গাড়ি উৎপাদনের জন্য অন্তত কিছু যন্ত্রাংশ তো দেশে তৈরি করতে হবে। তা নাহলে কিভাবে আপানি উৎপাদনকারী হবেন। সেটাকে উৎপাদন না বলে সংযোজন বলাই ভালো।”

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলা কারসের শোরুমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি এসইউভি গাড়ি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

যেভাবে গাড়ি ব্যবসায় হোসেন গ্রুপ

১৯২২ সালে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দিয়েছিলেন জাকির হোসেনের দাদা সাত্তার হাজি। তার বড় ছেলে আলী হোসেন স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে ‘তেজগাঁও রিরোলিং মিলস’ কিনে হোসেন গ্রুপ প্রতিষ্ঠান করেন।

রাসায়নিক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্রকৌশলপণ্য, আবাসন, হিমাগারসহ বিভিন্ন খাতে ১৭২টি পণ্য রয়েছে এ কোম্পানির।

এ ব্যবসায়ী পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের একজন আলী হোসেনের বড় ছেলে জাকির হোসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ২০০৬ সালে দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন জাকির।

প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে দুই বছর, বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’ এ এক বছর এবং পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক বছর কাজ করেন তিনি।

জাকির জানান, পারিবারিক ব্যবসাগুলো দেখভালের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে একটি গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি।

“জার্নিটা শুরু হয় ৫-৬ বছর আগে। আমি চিন্তা করলাম গাড়ি কিভাবে দেশেই ম্যানুফ্যাকচারিং করা যায়। অ্যাসেম্বলিং তো অনেকেই করে। তাই দেশের জন্য কিছু করতেই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলাম”, যোগ করেন তিনি।

তরুণ এ উদ্যোক্তা জানান, কোম্পানিটি নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটিতে স্থাপিত কারখানায় গাড়ি নির্মাণ করে বাজারে ছাড়লেও অধিকাংশ যন্ত্রাংশই এখন পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে চীন, জাপান ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।

“বাংলাদেশের রাস্তাঘাট বিবেচনায় রেখে ইন্দোনেশিয়া থেকে চেচিস, চীন থেকে বডি ও জাপান থেকে ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়েছে। একটি টেকসই পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে না পারলে শুধু আবেগ দিয়ে বাজার ধরা যাবে না,” যোগ করেন তিনি।

এমন উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে ডংফেং চায়না, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের যৌথ উদ্যোগ ডিএফএসকে, জাপানের ইশুজু, কিংস্টার চায়নাকে সহযোগী হিসাবে পেয়েছে ‘বাংলা কারস’।

জাকির হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জে ‘বাংলা কারস’ এর কারখানায় ২০০ জন দক্ষ লোক কাজ করছেন। এর মধ্যে দেশের প্রকৌশলী রয়েছেন ১৫০ জন দেশি, বাকিরা বিদেশি।

দেশের সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো টয়োটা, হোন্ডা, মিতসুবিসি কিংবা নিশানের মতো বিলাসবহুল বিদেশি গাড়ির ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে বাংলা কারেও রয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

 

বাজার কতটুকু, চ্যালেঞ্জ কী

বাংলা কারস এর ১২ লাইনের একটি উৎপাদন ইউনিটের নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। সেখানে কার, এসইউভি, সেডান, ডাবল কেবিন পিকআপ, ট্রাক, বাসসহ ১২ ধরনের গাড়ি তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো ছোট একটি বাজারে এত বড় পরিকল্পনা কিভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে?

এ প্রসঙ্গে জাকির বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছি- বাজার যাচাই, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সরবরাহ চুক্তি ও প্রকৌশলীদের টিম দাঁড় করাতে।

“এখন টিকে থাকতে হলে দেশের বাজার ধরার পাশাপাশি রপ্তানির বাজারও ধরতে হবে। রপ্তানির যোগ্যতা অর্জন করতে গেলে সরকারের বেশ কিছু সাপোর্ট তো অবশ্যই লাগবে।”

তার মতে, প্রতিবছর পাঁচ হাজার গাড়ি বিপণন করতে পারলে কোম্পানি টিকে থাকতে পারবে। ১২টি উৎপাদন লাইন স্থাপনে অন্তত ১৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ দরকার, যার সক্ষমতা বাংলা কারসের রয়েছে।

বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছর ধরেই প্রতিবছর চার লাখের বেশি নতুন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গাড়ি রাস্তায় নামছে।

সর্বশেষ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চার লাখ ২৪ হাজার ৫৩০টি নতুন গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮০৬টি, জিপ ৬৮ হাজার ৩৫৪টি, বাস ৪৮ হাজার ৭৮৯টি, মিনিবাস ২৭ হাজার ৩৬১টি, ট্রাক এক লাখ ৪১ হাজার ৫৩টি, মাইক্রোবাস এক লাখ ৫ হাজার ৪১২টি, পিকআপ এক লাখ ৩৭ হাজার ৯১৫টি, কভার্ড ভ্যান ৩৮ হাজার ৭৫২টি ও ডেলিভারি ভ্যান ৩১ হাজার ৩৪০টি।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিক্রি করেছে এক হাজার ৪৪৮টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি; যার বাজারমূল্য ছিল ৭৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ওই বছর ১০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মুনাফাও হয় বলে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বলছে।

গাড়ির এমন চাহিদার বাজারে দেশে পাঁচ হাজার গাড়ি তৈরি করে বিপণন করা খুব একটা কঠিন নয় বলেই মনে করে বাংলা কারস।

গাড়ির বাজারে চ্যালেঞ্জে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সুলভ মূল্যে প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর চেয়ে আরও বেশি সুবিধাসহ নতুন গাড়ি বাজারে আনা। এর সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে টানা পাঁচ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চিয়তা।

জাকির হোসেন বলেন, “২৭ লাখ ও ৩২ লাখ টাকায় সাত সিটের ১৫০০ সিসির যে এসইউভি গাড়িগুলো রাস্তায় নামিয়েছি, সেখানে কোটি টাকার গাড়ির সুবিধা রাখা হয়েছে। একই সুযোগ-সুবিধায় টয়োটা কোম্পানির গাড়িগুলোর মূল্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা।”

অটোবাংলা নামের একটি পোর্টালের নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাজারে বাজারে মিতসুবিসির (আউটল্যান্ডার) ১৯৯৮ সিসির সাত সিটের এসইউভি দাম দেখানো হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। মিতসুবিশি (এক্সপেন্ডা) ১৪৯৯ সিসির গাড়ির মূল্য দেখাচ্ছে ৩২ লাখ টাকা।

১৪৯৬ সিসির টয়োটা এভেঞ্জা ব্র্যান্ডের ৭ সিটের এসইউভির বাজার মূল্য ৩২ লাখ টাকা। ১৪৬২ সিসির সুজুকি কোম্পানির আর্টিগা ব্র্যান্ডের ৭ সিটের গাড়ির দাম ২১ থেকে ২৩ লাখ টাকা।

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলা কারসের শোরুমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি এসইউভি গাড়ি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

মূল্য সংযোজন কতটা?

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর গৌরব অর্জন করতে চাওয়া ‘বাংলা কারস লিমিটেড’ এখনই মূল্য সংযোজনে তেমন অবদান রাখতে পারছে না। আপাত সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজনের কথা বলছেন জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, “কার কোম্পানির জন্য উৎপাদন ব্যয় অনেক বড় খরচ। আপাতত সেবা যোগ করছি। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ‘ভ্যালু এডিশন’ আছে ২ থেকে ৫ শতাংশ। এটাকে আমরা ৬ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে যাব।

“আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে স্পার্কপ্লাগ উৎপাদনের চিন্তা রয়েছে। কারণ দেশে সিরামিক এভেইলেবল। পাশাপাশি যমুনা গ্রুপের টায়ার ও অন্যান্য স্থানীয় কোম্পানির কাছ থেকে গ্লাস কেনার পরিকল্পনা আছে।”

প্রাথমিক এসব পরিকল্পনা তুলে ধরে তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, “আমরা এখনও খুবই আর্লি স্টেজে আছি। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে স্টেজে আছি। মূল্য সংযোজনে কতটা এগিয়ে যেতে পারব, সেটা প্রডাকশন লাইনগুলো পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে বলতে পারছি না।”

প্রগতির প্রকৌশলী পুষ্পেশ্বর সিংহ রায়ের মতে, একটি গাড়ি নিজেদের বলে দাবি করতে হলে কমবেশি অন্তত ৩০ শতাংশ নিজস্ব পণ্য থাকার কথা বলা হয়। বাংলাদেশে এখনও এ ধরনের কোনো কোম্পানি গড়ে ওঠেনি। তাই উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে বিভিন্ন দেশ থেকে মালামাল আমদানির পাশাপাশি টায়ার, চেসিসসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে হাত দিতে হবে।

‘বাংলা কারস’ কবে পূর্ণাঙ্গ নিজেদের ‘বাংলা’ গাড়ি নিয়ে রাস্তা দাপিয়ে বেড়াবে সেটাই দেখার আশা।