বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দিতে তার সরকার ‘অঙ্গীকারাবদ্ধ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 09:38 AM
Updated : 28 Nov 2021, 01:48 PM

রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”

ইতোমধ্যে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) স্বাক্ষরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৮টি দেশে পণ্য রপ্তানিতে একতরফা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ৩৬টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত-করারোপন পরিহার চুক্তি রয়েছে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ বিভিন্ন জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সকল নীতিগত সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”

আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের ২ হাজার ৩৩২ জন অংশগ্রহণকারী নিবন্ধন করেছেন বলে ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইনানশিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল,কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র এবং ব্লু-ইকোনমি- সম্ভাবনাময় এই ১১টি খাতকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করেছে।  

“আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।”

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে এ বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নে তার নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, যে ২১ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার সরকার গঠন করেছিলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন ছিল তার অন্যতম।

১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে বিএনপির সময় বাংলাদেশ যেখানে ২৮৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছিল, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে আওয়ামী লীগের সময়ে তা বেড়ে ৮১৬ মিলিয়ন ডলার হয় বলে অনুষ্ঠানে তথ্য দেন শেখ হাসিনা।

“আমরা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি, যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে মাত্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হত।”

আওয়ামী লীগই সরকারে এসে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। তাছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও রপ্তানি উন্নয়নের লক্ষ্যে আইটি-ভিলেজ, হাই টেক-পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিই।

“অথচ আমাদের বাংলাদেশে এক সময় আমরা বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত করার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা সেই সুযোগটা নেয়নি এবং প্রত্যাখ্যান করেছিল।”

আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরপর তিন দফা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ-পরিশ্রমী জনসম্পদ সৃষ্টি, আকর্ষণীয় প্রণোদনার মাধ্যমে উদার বিনিয়োগ-নীতি প্রণয়ন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের মধ্যবর্তী ভৌগলিক অবস্থানের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর আস্থা বাড়ায় ৬০ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এখন আসছে পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে।

দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন এবং মহামারীর অতিঘাত সামাল দিতে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলেন।

ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।

এই অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তা পাঠান ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, চীনের  ভাইস মিনিস্টার ফর কমার্স রেন হংবিন, ওয়ার্ল্ড  ইকোনমিক ফোরোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরেমি জার্গেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফানসো গার্সিয়া মোরা এবং কনজিউমার ডিউরেবলস অফ কোক হোল্ডিং এএস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও সিঙ্গার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ফাতিহ কেমাল এবিক্লিওগ্লু।

এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পাঠ করেন তার দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী হোন্ডা তারোর বার্তা।

অনুষ্ঠানে ‘ডিসকভার লিমিটলেস’ শিরোনামের একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ সম্মেলনের প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচনও করেন।