উন্নয়নশীল হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবেলায় সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2021, 04:05 PM
Updated : 25 Nov 2021, 04:05 PM

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুমোদন পাওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আগামীতে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে মোটের উপর, সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য আমরা কাজ করছি।”

শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোসহ আরও কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে, তার ধারণাও সাংবাদিকদের দেন তিনি।

তিনি বলেন, “ইউএন ফাইনালি বলল, আমরা তিনটি ক্রাইটেরিয়াতে আগে যে সক্ষমতা অর্জন করেছিলাম, কোভিডের কারণেও সেইগুলোর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে, সেটা পাঁচ বছরে, ২০২৬ সালে।

“আমরা খুব আনন্দিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছার ফলে গত ১২ বছরে বাংলাদেশের যে অভাবনীয় সাফল্য হয়, তার ফলে আমরা এই ক্রাইটেরিয়া সবগুলো পূর্ণ করতে পেরেছি।”

চ্যালঞ্জগুলোর বিষয়ে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক মোমেন বলেন, “আমরা এলডিসি হিসাবে অনেকগুলো সুবিধা পেতাম, অস্ত্র ছাড়া সব কিছুতে, আমরা সেগুলোতে সস্তায় জিনিস বিক্রি করতে পারতাম। আগামীতে সেগুলো আমরা হারাব। যাতে না হারাই, আমাদের কমপিটিটিভনেস যাতে বাড়াতে পারি, সেজন্য আমরা কাজ করছি।”

তৈরি পোশাকের বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা আরও তিন বছর পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের কাছ থেকে সুবিধা আমরা যেটা পেতাম, সেটা আরও তিন বছর, ২০২৯ সাল পর্যন্ত তারা বাড়াতে মোটামুটিভাবে রাজি হয়েছে।

“আর আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে সুবিধা পেতাম, সেটা আমরা ২০৩৩ পর্যন্ত মোটামুটিভাবে তারা রাজি হয়েছে। আমরা চেয়েছি ২০২৬-এর পরে আরও ১২ বছর সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য, আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আমরা ভবিষ্যতে অধিকতর ঋণ পাব, কিন্তু সেখানে সুদের হার বাড়তে থাকবে। সে ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক। আমরা চাচ্ছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সুবিধাটা না হারাই, তার জন্য আমরা কাজ করছি।”

এর বাইরে দেশের উৎপাদনশীলতা ও বিপণনের সক্ষমতা বাড়াতে যে ‘হোমওয়ার্ক’ করা দরকার, তা নিয়েও সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।

বিভিন্ন দেশের সাথে এফটিএ ও পিটিএ করার কাজ চলছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে হয়তো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে চাচ্ছি। এগুলো প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি।

“এগুলো করতে পারলে আমাদের ধারণা আমাদের চ্যালেঞ্জ যেগুলো আছে, মোটামুটিভাবে হ্যান্ডল করতে পারব।”

মোমেন বলেন, “বিদেশিদের আমরা বলছি, আমরা পণ্য উৎপাদন করি, তাতে যেন তারা মূল্য বেশি দেয়। গার্মেন্টসের কথাই বলি, আমরা তাদেরকে অনেক কম মূল্যে সেগুলো দিই, এগুলোর যদি দাম বাড়ে, সেটা ভালো হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড পিস ইন দ্য কনটেক্সট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে ওই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ইউজিসি অধ্যাপক ফকরুল আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী ও মহাপরিচালক হারুন আল রশিদ বক্তব্য দেন।