মাঝে কমলেও আবার বাড়ল মুরগির দাম

প্রায় দুই মাস ধরে চড়া বিভিন্ন জাতের মুরগির দাম নাগালে আসছে না; এ সময়ে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি বেড়েছে দাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2021, 12:45 PM
Updated : 12 Nov 2021, 01:22 PM

মহামারীর ধাক্কায় উৎপাদন কমে যাওয়া এবং লকডউন শেষে পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে দামের এ অস্থিরতা চলছে বলে মনে করছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। বাজার স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলেও সরকারি এ দপ্তরের ধারণা।

পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরাও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে একই কথা বলে আসছেন।

ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম গত সপ্তাহে কেজিতে ১৫ টাকা করে কমলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়ে আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুরের পীরেরবাগ ও বড়বাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে কমে ১৫০ টাকায় নেমেছিল।

ব্রয়লারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেয়ার মুরগিও বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২৩০ টাকায় নেমেছিল। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা একমাস আগে ছিল সাড়ে ৩০০ টাকা। দুই মাস আগে ২২০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত এ জাতের মুরগি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত দুই মাস ধরেই মুরগির বাজারে দাম বেড়েই চলেছে। অস্থিরতার বাজারে মাঝেমধ্যে অল্প একটু কমলেও বাড়ছে আরও বেশি। চলতি সপ্তাহের দর ছিল ‌১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।

গত কয়েক বছর ধরে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি কমবেশি ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছিল। সর্বনিম্ন দামের ব্যবধান হিসাব করলে দুই মাসে দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দামের হিসাবে ৪১ শতাংশের বেশি। আর দুই মাসের সর্বোচ্চ দামের ব্যবধান হিসাবে নিলে তা ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

একইভাবে লেয়ার মুরগির দাম ছিল প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতিকেজি ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে। আর দেশি মুরগির দাম ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছিল।

মহামারীর ধকল ও লকডাউনের অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার পরও মুরগির বাজারে দামের এমন অস্থিরতা কেন? জানতে চাইলে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে বিবেচনা করলে মুরগির মাংসের বাজার খুব বেশি একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে নেই। বরং কোভিডের সময়ে দীর্ঘদিন ধরে মুরগি বিক্রি হচ্ছিল কম দামে, যাতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিবেচনা করলে ব্রয়লার মুরগির দাম কত হওয়া উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারের গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকার ওপরে। প্রকৃত হিসাব বিবেচনায় নিলে প্রান্তিক খামারিদের জন্য ব্রয়লার মুরগির দাম হওয়া উচিত প্রতিকেজি ১৪০ টাকার মধ্যে।

“কিন্তু এখন প্রকৃত বাজারটি আরও বেশি। এর কারণ হচ্ছে দাম কম থাকার কারণে গত দুই বছরে অনেক ছোট ছোট খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। কেবল বড় বড় কোম্পানিগুলোই উৎপাদনে ছিল। বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারগুলো আবার চালু হলে হয়তো বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।“

খামারে উৎপাদিত সোনালি ও লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি চলছে বলে জানান জিনাত সুলতানা।

মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত প্লানেট গ্রুপের পক্ষ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়, গত এক বছরে পোল্ট্রি ফিডের মূল্য ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিকেজি ৩৮ টাকায় যে খাবার পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫৪ টাকায়। মুরগির দাম বৃদ্ধির এটি অন্যতম কারণ।

এছাড়া গত দুই বছরে লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম অস্বাভাবিক কম ছিল। অনেক হ্যাচারি মালিক হ্যাচারি বন্ধ করে দিয়েছের। এ ব্যাপারগুলো সম্প্রতি পোল্ট্রি শিল্পে নেতিচাবক প্রভাব ফেলেছে।

“২০২০ সালে হ্যাচারি মালিকরা ৩৩ টাকা দামের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫/৭ টাকায় বিক্রি করেছিল। একদিন বয়সী লেয়ার মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়েছিল ৮/১০ টাকায় যার প্রকৃত মূল্য ছিল ৪০ টাকা। এসব সমস্যার কারণে প্যারেন্ট স্টক ফার্ম ও হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

“এই পরিস্থিতিতে লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ার পর সামাজিক অনুষ্ঠান বৃ্দ্ধি পাওয়ায় মুরগির মাংসের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে,” প্লানেট গ্রুপের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।

মুরগির মাংসের বাজার স্বাভাবিক হতে আরও তিন মাস সময় প্রয়োজন বলেও মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাজারে নতুন টমেটো

শীত মৌসুমের নতুন টমেটো বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে বরাবরের মতোই দাম চড়া।

এদিন কারওয়ান বাজারে নতুন টমেটো প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

একই সঙ্গে সিম, বরবটি, ঢেঁড়শ, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য শাক সবজির দামও বিগত কয়েক সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে টমেটো উৎপাদন কমে যায়। এই সময় প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশ থেকে টমেটো, গাজর ও অন্যান্য কিছু সবজি আমদানি হয়ে থাকে।

বাজারে এখনও ভারতীয় টমেটো ও গাজর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়।

ফাইল ছবি

শীতের সবজির মধ্যে গত এক সপ্তাহে শুধু সিমের দামই কিছুটা কমেছে, প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

এছাড়া প্রতিটি ফুলকপি ৪০ টাকায়, প্রতিকেজি বরবটি ৭০ টাকায়, পটল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, মুলা ৪০ টাকায়, বেগুন, চিচিঙ্গা, ঝিঙা ও ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিটি ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় যা সাধারণত ভরা মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে থাকে।

কারওয়ান বাজারের একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, “সরবরাহ আরও না বাড়লে দাম সহজে কমবে না। কেননা কম দামে কিনতে না পারলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারব না।”