মিশরের বোয়িং ভাড়া: জড়িতদের লিখিত বক্তব্য চায় সংসদীয় কমিটি

সাত বছর আগে মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ায় জড়িত বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2021, 02:24 PM
Updated : 21 Oct 2021, 03:53 PM

আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটির কর্মকর্তাদের লিখিত বক্তব্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।

সভাপতি রআম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কমিটি ওই উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের লিখিত বক্তব্য চেয়েছে। তাদের বক্তব্য পাওয়ার পর আমাদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব।”

বৈঠকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দীন আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এরা দুজন ২৯ সেপ্টেম্বর কমিটিতে তাদের বক্তব্য দেন।

পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি ভাড়া নিয়েছিল বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে।

এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়।

সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত বছরের অক্টোবর মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানায়, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষতি হয়েছে ১১শ কোটি টাকা।

ওই বৈঠকে জানানো হয়, এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা, আর খরচ হয়েছিল তিনহাজার ৩০০ কোটি টাকা।

দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিমাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্ত হতে পেরেছে বিমান।

গত দশম সংসদের বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এই বিমান দুটি ভাড়া নেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার বিমান ভাড়া নেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৬-৭ জন কর্মকর্তাকে ডাকে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা মৌখিক বক্তব্য শুরু করলে কমিটির সভাপতি তাদের থামিয়ে দেন। তিনি তাদের লিখিত বক্তব্য কমিটির কাছে জমা দিতে বলেন।

এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, জানানো হয়-মিশরীয় দুইটি বিমান লিজ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তাদের লিখিত বক্তব্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

এদিকে বৈঠকে কমিটি কক্সবাজারে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল ও মোটেল সংস্কারের সুপারিশ করে। সম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও কক্সবাজারের পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবাল, প্রবাল ও উপলকে একত্রিত করে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে আধুনিক, আকর্ষণীয় এবং উন্নত সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পর্যটন স্থাপনা তৈরির সুপারিশ করেছে।

কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, কাজী ফিরোজ রশীদ, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ  অংশ নেন।