বিদেশে বিনিয়োগ সহজ হচ্ছে, জানালেন প্রধানমন্ত্রী

দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2021, 07:10 AM
Updated : 21 Oct 2021, 12:21 PM

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক দেশে আমরাও বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন, বেসরকারি খাতও বিনিয়োগ করতে পারে। আমি ভবিষ্যতে সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করব। তার জন্য আমরা প্রস্ততি নিচ্ছি।”

বর্তমান আইনে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে বিনিয়োগ করতে হয়।

২০১৫ সালে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন- সংশোধন করে এই সুযোগ তৈরি করা হলেও সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়নি। 

এ পর্যন্ত ১৭টি কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করছে। এসব কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫১১ কোটি টাকা।

বিদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে এরইমধ্যে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে সরকার। সব পক্ষের মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করার কথা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে যেমন বিনিয়োগ হবে, আমরাও অন্য দেশে যেন বিনিয়োগ করতে পারি। কারণ আমরা তো উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছি। কাজেই আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা নিজের দেশে না, বিদেশে বিনিয়োগ করেও সেই পণ্য সেখানে বাজারজাত করা বা আমাদের চাহিদা মত নিয়ে আসা- সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে চাই এবং সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাই।” 

এ ক্ষেত্রে বাণিজ মন্ত্রণালয়কে ‘বিশেষ ভূমিকা’ রাখতে হবে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়েই কিন্তু উন্নতি হয়। কাজেই সেই ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগটা সৃষ্টি করা, যার জন্য এই সেন্টারটা (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার) আমরা তৈরি করেছি।”

ঢাকার অদূরে পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন ব্রিজের কাছে ২০ একর জমির ওপর এই এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। সেজন্য চীন সরকার এবং সেদেশের বন্ধুপ্রতীম জনগণকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পূর্বাচলে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রপ্তানি বাজারে টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ীদের বলব, যখনই আপনারা কোনো পণ্য উৎপাদন করবেন, সময়ের চাহিদার সাথে মিলিয়ে, বা যে দেশে করছেন, সেখানকার চাহিদার সাথে মিলিয়ে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। সেখানে কিন্তু কিপটামো  করলে চলবে না। সেটা যদি করতে পারেন, তাহলে বাজারে টিকে থাকতে পারবেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্পখাতের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নিজস্ব উদ্যোগও থাকতে হবে।  

রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য যেটা সব থেকে বড় প্রয়োজন, সেটা হল আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ। কারণ আমরা এখন একটা ইস্যুর উপরই সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি।

“যেমন আমাদের পোশাক শিল্প। আর এই শিল্পে আমাদের নারী শ্রমিকরা অনেক কাজ করে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। সেই সাথে সাথে আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।”

নানা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়লেও ভবিষ্যতে তা আরো বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ব্যবসায়ী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আপনারাও এটাই চেষ্টা করবেন যেন আমাদের পণ্যের আরো বহুমুখীকরণ করা যায়, রপ্তানির বাস্কেটটা আরো বৃদ্ধি করা এবং কোন ধরনের পণ্য কোন দেশে আমরা রপ্তানি করতে পারি সেই বিষয়টার উপর আরো গুরুত্ব দেওয়া এবং সেইভাবে পন্য উৎপাদনে ব্যবস্থা নেওয়া।

পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।