জিআই সনদ পাচ্ছে ফজলি আর বাগদা

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে এবার জিআই নিবন্ধন সনদ পেতে যাচ্ছে রাজশাহীর সুস্বাদু ফজলি আম আর বাগদা চিংড়ি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2021, 05:39 AM
Updated : 9 Dec 2021, 04:24 AM

বাংলাদেশের ফজলি আম রসালো, আঁশবিহীন বড় আকারের আম। বাগদা চিংড়ি হচ্ছে কালো ডোরাকাটা চিংড়ি মাছ।

সরকারের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. আবদুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, “আমাদের দেশের ফজলি আম ও বাগদা চিংড়িকে জিআই পণ্য স্বীকৃতি দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সনদ হয়ে যাবে।”

সব আনুষ্ঠানিকতা সারা হলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জিআই নিবন্ধন পাওয়া পণ্যের সংখ্যা হবে ১১টি।

২০১৭ সালের মার্চে ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি জন্য আবেদন করে  রাজশাহীর ফল উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র। আর মৎস্য অধিদপ্তর ২০১৯ সালের মে মাসে বাগদা চিংড়ির জন্য ওই আবেদন করে।

আবদুস সাত্তার জানান, নিয়ম অনুযায়ী এ দুটি কৃষি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক যাচাই করে দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে। জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেওয়া হয়। ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি নিয়ে কেউ আপত্তি করেনি।

ফজলি: বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারেও এ আম পাওয়া যায়। অন্য আমের চেয়ে বাজারে আসে একটু দেরিতে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফজলি আম পাকে।

আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি এ আম আকারে বেশ বড় হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ফজলি চাষের জন্য বিখ্যাত।

বাগদা: পৃথিবীতে বাগদা চিংড়ির প্রজাতি আছে পাঁচশর বেশি। অন্যান্য চিংড়ির তুলনায় কালো ডোরা কাটা বাগদা একটু চ্যাপ্টা আকারের। যুক্তরাষ্ট্র, একুয়েডর, মেক্সিকো, চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াতেও বাগদা চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় চাষ হওয়া চিংড়ির ৮০ শতাংশই বাগদা।

আবদুস সাত্তার বলন, “আমাদের দেশের ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির যে স্বাদ বা ঘ্রাণ বা বৈশিষ্ট্য, অন্য দেশে তা পাওয়া যায় না। এশিয়ার কিছু দেশে ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প বা বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়, তবে গঠন-কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যে আমাদের সাথে তার মিল নেই।”

জিআই সনদ কী

ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন- জিআই) হচ্ছে- একটি প্রতীক বা চিহ্ন, যা পণ্য ও সেবার উৎস, গুণাগুণ ও সুনাম ধারণ ও প্রচার করে।

কোনো দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ যদি কোনো পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্ব রাখে, সেই দেশের সংস্কৃতির সাথে যদি বিষয়টি সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেটাকে সে দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের পেটেন্টস, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) জিআই সনদ দেয়।

জিআই সনদ পেলে ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে। এসব পণ্যে আলাদা ট্যাগ বা স্টিকার ব্যবহার করা যাবে। প্রাকৃতিক উপায়ে পণ্য উৎপাদন করে সব গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে বাজারজাত করতে হবে। আলাদাভাবে চিহ্নিত হওয়ায় রপ্তানিতে তুলনামূলক বেশি দাম পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

সনদ পেয়েছে কোন কোন পণ্য?

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হওয়ার পর সে আইনের বিধিমালা তৈরি করা হয়।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক সামগ্রী হিসেবে স্বীকৃতি পায় জামদানি। পরের বছর ইলিশ এবং ২০১৯ সালে ক্ষীরষাপাতি আমকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এরপর চলতি বছরের জুনে একসঙ্গে স্বীকৃতি পায় ঢাকাই মসলিন, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, নেত্রকোণার বিজয়পুরের সাদামাটি ও বাংলাদেশের কালিজিরা চাল।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট ৩৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে।

রংপুরের হাড়িভাঙা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা ও নোয়াখালীর মহিষের দুধের দইও জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদনের তালিকায় রয়েছে।