ইভ্যালির ব্যবস্থাপনায় পর্ষদ করে দিল আদালত

গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির অবসায়ন এবং তার আগে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে চার সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2021, 08:51 AM
Updated : 18 Oct 2021, 08:51 AM

এ পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে।

পর্ষদে সদস্য হিসেবে আছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকছেন।

বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চ সোমবার এই পর্ষদ গঠন করে দেয়।

আগামী ৩০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখে এ সময়ের মধ্যে পর্ষদকে বৈঠক করে অগ্রগতি জানাতে বলেছে আদালত।

বিচারক বলেন, “কোম্পানি সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধের বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে। এ আদালত শুধু কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখবে।”

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম মাসুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুজ্জামান। বাণিজ্য মন্ত্রলায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাস কান্তি বল।

আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই রিট আবেদনে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে আরজি জানানো হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালত ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

“সেদিন আদালত বলেছিল, পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আরজি বিবাদীদের উপস্থিতিতে বিবেচনা করা হবে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবের নাম প্রস্তাব করে। তাদের মধ্যে একজনকে রাখা হয়েছে পর্ষদে।” 

ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে এক গ্রাহকের আবেদনে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

আদেশে বলা হয়,  বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে ইভ্যালির সম্পদে কেউ হাত দিতে পারবে না।

সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, সেই কারণ দর্শাতেও বলে হাই কোর্ট।

ইভ্যালি লিমিটেড, যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনকারী পক্ষ ফের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আরজি জানালে ইভ্যালির যাবতীয় নথি তলব করে হাই কোর্ট।

সে অনুযায়ী রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস নথি দাখিলকরলে আদালত ১৮ অক্টোবর আদেশের জন্য রেখেছিল। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার হাই কোর্ট পর্ষদ গঠন করে দিল।

গাড়ি, মোটরসাইকেল, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন বিলাসী পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নজরে এসেছিল ইভ্যালি।

তাদের চমকদার ‘অফারের’ প্রলোভনে অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়।

কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া তাদের টাকাও ফেরত দেয়নি।

এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ইতোমধ্যে গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৩৩ হাজার ৩০৮ টাকা পরিশোধ করেও পণ্য না পেয়ে ফরহাদ হোসেন নামের এক গ্রাহক ইভ্যালির অবসায়ন, ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা চেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আবেদন করেন

সে আবেদনেই ইভ্যালির অবসায়ন প্রশ্নে নোটিস জারির পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।