ইইউতে আগামীতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে ‘বড় বাধা’ কাটল: বিজিএমইএ

ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২৯ সালের পরও জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে ব্ড় বাধা কেটেছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2021, 03:43 PM
Updated : 2 Oct 2021, 03:43 PM

ইউরোপের এ জোটের দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা বিষয়ক ‘২০২৪-২০৩৪ জিএসপি রেগুলেশনের’ অন্যতম একটি শর্তে বাংলাদেশ ছাড় পেয়েছে বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, “রেগুলেশনের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ‘ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড’ থেকে অব্যাহতি দেওয়া বা এর বিকল্প ফর্মুলা প্রবর্তনের অনুরোধে ইইউ সাড়া দেওয়ায় আর বড় কোনো বাধা নেই।“

শনিবার রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এই তথ্য জানান।

কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে রপ্তানি চাঙ্গা করতে মাসব্যাপী উত্তর আমেরিকা সফরের বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি দেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছে সফরকালে বাংলাদেশি পোশাকের মূল্য বাড়ানোর আহবান জানানোর কথাও তুলে ধরেন।

তিনি জানান, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) সঙ্গে বৈঠকে দাম বৃদ্ধির এ দাবি জানানো হয়।

ইউইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এরপরও যেন আরও অন্তত ১২ বছর এই সুবিধা (ইবিএ) বহাল রাখা হয় তার জন্য সরকার এবং বিজিএমইএ একসঙ্গে কাজ করছে।

“আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রস্তাবিত ২০২৪-২০৩৪ জিএসপি রেগুলেশনে ‘ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড’ শর্তটি বাদ দিয়েছে। ফলে আমরা যখনই ইবিএ সুবিধা হারাই না কেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আর বড় কোন বাধা থাকল না।“

ইউরোপে ৬০ শতাংশ রপ্তানি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর প্রধান এ বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পরিবর্তন আসবে।

“আমরা ইবিএ পরবর্তী শুল্কসুবিধা জিএসপি প্লাসের বিষয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং ব্রাসেলসে একাধিক বৈঠক করেছি।“

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ পদক্ষেপের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উত্তর আমেরিকা সফর প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গত বছরের অগাস্ট থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাকের মূল্য কমেছে ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।

“এ সময়ে দরপতনের চিত্রটি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় না। আর করোনার সময়ে ‘অর্ডার ক্যানসেলেশন’ ও ‘ডিসকাউন্টের’ যেই জোয়ার আমরা দেখেছি, তাতে করে ‘ইথিক্যাল সোর্সিং’ এর দাবিটি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।”

এ বিষয়ে এএএফএ এর সদস্যদেরকে আরও দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের দর নির্ধারণে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাদের বলা হয়েছে, “উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না।”

ফারুক হাসান জানান, নতুন বাজারের সন্ধানে মাসব্যাপী এ সফরকালে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

উত্তরা আমেরিকা সফরে বিজিএমইএর প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বর্তমান সহসভাপতি মিরান আলী ও পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব।

এ সফর পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি তৈরিতেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা বিজিএমইএ সভাপতির।

স্থগিত অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।

সফরকালে তারা ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিনিধি, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ), ওয়ালমার্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩০টি বৈঠকে করেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিতি ছিলেন।

বৈঠকগুলোতে পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণে আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা (আরএসসি), কর্মস্থলে নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য ‘ট্রাইপাট্রাইট কনসালটেটিভ কাউন্সিল’ গঠন, রানা প্লাজার পর সরকারের নেওয়া শ্রমিকদের কল্যাণ ও শিল্পকে রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং মহামারী পরিস্থিতিতে কারখানার কর্মপরিবেশ বিষয়ে তুলে ধরা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মার্কেট শেয়ার ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়ানো সম্ভব। আমরা সার্কিবভাবে চেষ্টা করছি এই শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে।

পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, মহামারীকালে গত দুই অর্থবছরে রপ্তানি কমেছে, উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হয়নি, নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। সরকার প্রনোদনা প্যাকেজ প্রদান না করলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হত না।

“তবে মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শিল্পও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ফ্রেইট ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কন্টেইনার ভাড়া ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে যার মেধ্যে অন্যতম হচ্ছে পণ্যের দরপতন এবং স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সমস্যা। এগুলোর সমাধান হলেও আবার আগের অবস্থানে সহজেই ফিরে যেতে পারে তৈরি পোশাক শিল্প।“

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিজিএমইএ এর বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে-

>> শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টির পরিবর্তে ৩৬টি করা।

>> লোকাল ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কাঁচামাল, সুতা ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া।

>> গ্রুপ অব কোম্পানির একটি প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ না করা।

>> সুতা থেকে নিট গার্মেন্টস উৎপাদনে অপচয় হার বৃদ্ধির কারণে জরিমানা আরোপ না করা।