প্রাণিখাদ্যের উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানি বন্ধের দাবি

প্রাণিখাদ্য তৈরির প্রধান উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ এর ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টির অভিযোগ এনে এর রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 11:20 AM
Updated : 27 Sept 2021, 11:20 AM

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ ফিশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়শন।

প্যাকেটজাত হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধ করা, খামারিদের বিদ্যুৎ বিল কৃষি শ্রেণির আওতায়ভুক্ত করা, তরল দুধের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা, পশুখাদ্যের দাম কমাতে টিসিবির মাধ্যমে সরবরাহ করারও দাবি জানানো হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।

ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইরমান হোসেন বলেন, সরকার ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উৎপাদনকারীরা এর দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।

উৎপাদনকারীরা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে বাজারে দ্রুত সরবরাহ দেওয়া দরকার।

“নইলে দেশের পোল্ট্রি, মৎস্যসহ প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে। খামারিরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বে।”

অভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দিলে কিংবা দাম বেড়ে গেলে ভারত যে চাল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, সে কথা তুলে ধরে বাংলাদেশকে সরকারকেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান ইমরান।

লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, “আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্য দেশের শিল্পের স্বার্থে রপ্তানি উন্মুক্ত করে দিয়ে কার্যত দেশীয় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

“অতি দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ করে দেশি শিল্পকে রক্ষার জন্য আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি।”

ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের এই নেতা জানান, পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর খাদ্যের পেছনেই খামারিদের সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয়। যা মোট খরচের ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা প্রাণিখাদ্যের প্রধান উপকরণ হল ‘সয়াবিন মিল’ বা ‘সয়াবিন এক্সট্রাকশন’, চালের গুঁড়া, গমের ভূষি, ডালের ভূষি ইত্যাদি। পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর দেহ গঠনে অন্যতম খাদ্য উপকরণ ‘সয়াবিল মিল’।

ডিম, মাছ, মুরগির খামারেও খাদ্যের পেছনে এর খরচ প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “ফিডের দাম বাড়লে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হবে খামারিদের।”

ইমরান বলেন, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে যে কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তার মধ্যে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, গম, আটা ময়দা, ভাঙ্গা চাল, চালের কুড়া, ফিশ মিল, সরিষার খৈল, তৈল, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ভুট্টা ও ‘সয়াবিন মিল’।

তিনি জানান দেশের ‘সয়াবিন মিল’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ‍শুল্কমুক্তভাবে সয়াবিন বীজ আমদানি করে। সেখান থেকে সয়াবিন তেল উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে পাওয়া ‘সয়াবিন মিল’ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে।

দেশের মানুষের স্বার্থে ‘শূন্য শুল্ক’ সুবিধায় আনা সয়াবিন বীজ থেকে উৎপাদিত ‘সয়াবিন মিল’ তিন থেকে চারটি সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি বেশি মুনাফার লোভে রপ্তানি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান হোসেন।

তিনি বলেন, “অতীতে কখনও ভারতে সয়াবিন সিড কিংবা সয়াবিন মিল রপ্তানি হয়নি, বরং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন মিল আমদানি করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন ‘সয়াবিন মিলের’ চাহিদার রয়েছে। এর ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ দেশেই উৎপাদিত হয়। বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়।

‘সয়াবিন মিল’ আমদানি করতে বেশ কিছু সমস্যা পোহাতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়ক পথে ৭ থেকে ১০ দিন, কনটেইনারে ১৫ থেকে ২০ দিন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আলী আজম রমহান শিবলী, সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান, অর্থ সম্পাদক জাফর আমমেদ পাটোয়ারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজিব উল্লাহসহ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।