বিশ্ববাজারে এখন তেল-চিনির দাম ঊর্ধমুখী, এর প্রভাবে দেশের বাজারেও পণ্য দুটির দাম বেড়েই চলছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। আর প্যাকেটের সাদা চিনি প্রতিকেজি ৮০ টাকা, লাল চিনি বা আখের চিনি প্রতিকেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিন তেলের দাম প্রতিকেজি ১৪৩ টাকা আর প্রতি লিটার ১৩৭ টাকা। যদিও গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো চিনির প্রতিকেজি ৭৪ টাকা থেকে ৭৫ টাকা ঠিক করে দেয় সরকার।
মীরপুর পীরেরবাগে মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি মীরপুর-১ নম্বরের পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি চিনি ৭৬ টাকা ৬০ পয়সায় কিনে এসেছেন। এখন ৮০ টাকার কমে বিক্রি করলে তার ‘ব্যবসা হবে না’।
একইভাবে খোলা সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ১৪১ টাকা ৬০ পয়সা দরে কেনার কথা বললেন শফিকুল। খুচরায় তিনি প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ১৪৩ টাকায় আর প্রতি লিটার ১৩৭ টাকা দরে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো অবশ্য দাবি করছেন, ভোজ্যতেল এখন ‘সরকার নির্ধারিত দরের মধ্যেই’ বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে প্রতিমণ খোলা সয়াবিন তেল ৫০৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা দাবি করলেন তিনি। সে হিসেবে প্রতি লিটারের দাম পড়ে ১২৪ টাকা।
এর সঙ্গে লাভের অংশ যোগ করে খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাজারে এখনই সর্বোচ্চ দাম চলছে। সুতরাং খুচরায় সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্য ১২৯ টাকা থেকে বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির সুযোগ নেই।”
পুরান ঢাকার মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম মাওলা অভিযোগ করলেন, সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও মিল মালিকরা সেটা ‘মানেন না’।
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় বসে বসে দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু তারা তো আর মাল সরবরাহ করে না। আমরা প্রতি কেজি চিনি ৭৫ টাকা করে মিল গেইট থেকে চিনি কিনছি। তাহলে সেই চিনি এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করব কীভাবে?
“মন্ত্রণালয় তো খুচরায় ৭৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিল। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর মিলগুলো সেই দামে কোনো পণ্যই বিক্রি করেনি। তাহলে এই নাটকগুলো করার মানে কী?”
তবে কোনো মিলের নাম নির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি ১৭ বছর ধরে পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসা গোলাম মাওলা।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১২৩ টাকা ৭৮ পয়সা, পাম তেল ১১৫ টাকা ৮০ পয়সা এবং সুপার পাম তেল ১১৮ টাকা ২১ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আর চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৪ টাকা ২৫ পয়সায়।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নজরদারির উদ্যোগ জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ইলিশের দামও চড়া
বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে শহরগুলোতে ইলিশের দাম পড়ে গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে। তবে প্রজনন মওসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে এমন খবরে দেশের বাজারে বেড়ে গেছে ইলিশের দাম।
শুক্রবার পীরেরবাগ ও বড়বাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেল, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। আধাকেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। আরও ছোট আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৫০০ টাকার মধ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম জি ২৪ঘণ্টার লাইভ বুলেটিনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইলিশ আসতে শুরু করার পর পশ্চিমবঙ্গের বাজারে মিয়ানমার থেকে আসা ইলিশের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
গত মাসে লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখনও মুরগির দাম বাড়তি।
মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা জানান, এখন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায় যা গত সপ্তাহেও ১৫৫ টাকায় বিক্রি হত।
একইভাবে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া লেয়ার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৪০ টাকায়। একেবারে গ্রামের গৃহস্তদের খামার থেকে আসা ৭০০ গ্রাম ওজনের দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪২০ টাকায়।
বর্ষা মওসুম শেষে শীত শুরুর আগে পুরোনো সবজির দামও একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে। এ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পটল ও কাঁচা মরিচের দাম।
বাজারে প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ৪০ টাকা এবং তার আগের সপ্তাহে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছিল।
এছাড়া গোল বেগুন ৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুমুখী ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কাঁচা মারিচের দামও বেড়েছে। তিনদিন আগে প্রতি পাল্লা সাড়ে ৩০০ টাকা ছিল, এখন তা সাড়ে ৬০০ টাকায় উঠেছে। অর্থাৎ, আগে প্রতিকেজি ৭০/৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়।
বাজারে লাউ ৪০ টাকা করে আর কাঁচা কলা এক হালি ৩০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেল।