টাকা ফেরতে ইভ্যালির সম্পদ খুঁজে দেখব: মন্ত্রী

ই-কমার্স জালিয়াতিতে সবচেয়ে আলোচিত ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরতের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 03:59 PM
Updated : 22 Sept 2021, 03:59 PM

এ জন্য ইভ্যালির সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখা এবং তা বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার সচিবালয়ে ই কমার্সের সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে এক আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভায় ই কমার্সের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এ খাতের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন, নতুন আইন প্রণয়ন, ব্যবসা করতে ‘ইউনিক বিজনেস আইডি’ গ্রহণ এবং এসক্রো সার্ভিসকে অটোমেটেড করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে আগামীকাল থেকেই কাজ শুরু করা হবে।“

বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে টিপু মুনশি বলেন, “ই কমার্সে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকার এ ব্যবসাকে বন্ধ করবে না। গত ৪ জুলাই যে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার ফলে এখন আর গ্রাহকের সঙ্গে চিট করার সুযোগ নেই।”

নতুন নিয়মে পণ্য গ্রাহকের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার আগে গ্রাহকের টাকা বিক্রেতাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এই নিয়ম চালু করতে দুই বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হলেও, বিলম্বের বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।

ইভ্যালি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “তাদের প্রপার্টি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইভ্যালির রাসেল জেলে আছেন। আমরা তার সম্পদের হিসাব করে দেখব।

“যদি দেখি তাকে বের করা গেলে তার সম্পদ বিক্রি করে কিছু টাকা ফেরতের ব্যবস্থা হয়, তাহলে সেই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।”

রাসেলের গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে অনেক গ্রাহক ও মার্চেন্ট বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে। তাদের দাবি, ইভ্যালির এ কর্ণধার বাইরে থাকলে তারা টাকা ফেরত পাবেন।

তার মুক্তি বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে টিপু মুনশি বলেন, “এখন তার হাত যদি শূন্য হয়, যদি তার কাছে গ্রাহককে ফেরত দেওয়ার মত কোনো টাকা না থাকে- তাহলে তাকে মুক্তি দিয়ে মুক্ত বাতাসে ঘুরতে দিয়ে লাভ কী।

“আর যদি দেখা যায় তার সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়া যাবে তাহলে মুক্তির বিষয়টি আইন বিবেচনা করবে।“

সব মিলিয়ে ১০/১২টি ই কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মত একই পদ্ধতিতে ব্যবসা করেছে এবং এগুলোতে গ্রাহকের বিপুল টাকা আটকা পড়েছে।

টাকা ফেরতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার তো আর টাকা নেয়নি। যারা কেনাকাটা করে লাভবান হয়েছিল, সেই লাভের ভাগও পায়নি। সরকার কিভাবে টাকা ফেরত দেবে। তারপরও এই বিষয় নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করব।“

ই কমার্সের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন গত ৪ জুলাই যেই নীতিমালা চালু হয়েছে। বিশেষ করে এসক্রো সিস্টেম চালু হয়েছে। এখন কিন্তু কোনো কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারছে না। এখন আর চিট করার কোনো সুযোগ থাকছে না।

“আমরা একটা হিসাব পেয়েছি। গত জুলাই মাসের আগ পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার মত বেচাকেনা হয়েছে ই কমার্সে। আর নীতিমালা চালুর পর ৪০০ কোটি কোটি টাকার অর্ডার পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অর্ডার এসক্রো সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।“

সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আলোচনায় ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাবও কেউ কেউ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা গুরুত্ব পায়নি।

“সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ই-কমার্স দেখাশোনার জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ আইন না থাকার কারণে অনেক সময় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যারা ব্যবসার নামে প্রতারণা করেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায় না। আইনটি আরও পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এটা একটু সময় লাগবে।“

ইতোমধ্যে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ই কমার্সের নামে ব্যবসা করতে হলে এখন ইউনিক বিজনেস আইডি নিতে হবে-সেই ব্যবস্থা করা হবে। এসক্রো সার্ভিসকে অটোমেটেড করা হবে।“