বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংগঠন দুটির নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বৈঠক বেশ ভালো হয়েছে। অনেক্ষণ আলোচনা করেছি। আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
“এখন থেকে সব পরিহন মালিক-শ্রমিক কাজে নামবে। কোথাও ঝামেলা থাকবে না। আমাদের ১৫টি দাবির মধ্যে শুধু আয়কর বাড়ানোর বিষয়টি সমাধান হয়নি; অন্য সব দাবি মানা হয়েছে।”
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা ১৫টি দাবি-দাওয়া আমাদের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। একটা কর্মসূচিও (৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি) দিয়েছিলেন। সভায় আমরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো শুনেছি। তারা যথাযথভাবে আমাদের কাছে উত্থাপন করেছেন।"
“যে দাবিগুলো তাৎক্ষণিক বা এখনই বাস্তবায়ন করা উচিত বলে আমরা মনে করেছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে বলেছি- আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো মনে করেছি সময় লাগবে, আমাদের সচিব মহোদয়রা নোট নিয়েছেন এবং তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলোর ব্যবস্থা নেবেন।”
ধর্মঘটের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠা-নামা চললেও ট্রাক-কভার্ড ভ্যান না চলায় বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই সংগঠনের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সমঝোতার উদ্যোগ নেন। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা ১১টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যেটি ছিল, সেটার বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান একটি টাস্কফোর্স গঠন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি সমাধান করবেন বলেছেন।
“অন্যান্য যে দাবি ছিল, সবগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হওয়ার পর তারা বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।”
ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, “মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে আজকের এই আলোচনা বৈঠকে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলাম।”
বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমদ বলেন, “আজকের দীর্ঘ সময়ের বৈঠকে সন্তুষ্ট হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।”
মালিক-শ্রমিকদের কিছু দাবি সড়ক নিরাপত্তার জন্য ভালো নয় বলে সমালোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। যে দাবিগুলো যৌক্তিক, একজন ১০ বছর ধরে প্রাইমমুভার চালায় কিন্তু তার লাইসেন্স হল হালকা কিংবা মাঝারি বাহনের। তাদের দাবি ছিল যারা চালাচ্ছেন তাদের একটা টেস্ট করে বিআরটিএর মাধ্যমে যদি লাইসেন্স পান, তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন। উনারা অযৌক্তিক কিছু বলেননি।"
জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ কভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্যপরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনসহ চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন অঞ্চলে মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ১৮ জন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন।