ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 10:06 AM
Updated : 22 Sept 2021, 12:19 PM

ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে এক গ্রাহকের আবেদনে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

আদেশে বলা হয়,  বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে ইভ্যালির সম্পদে কেউ হাত দিতে পারবে না।

বছর তিনেক আগে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজারে আলোড়ন ফেলে দেওয়া কোম্পানি ইভ্যালি এখন বিপুল দেনায় ডুবতে বসেছে।

এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে  ইতোমধ্যে গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, সেই কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে হাই কোর্ট।

ইভ্যালি লিমিটেড, যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে এ নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে তাদের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদেশে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আরজি বিবাদীদের উপস্থিতিতে বিবেচনা করা হবে।

আদালতে আবেদনকারী ফরহাদ হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম মাসুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন।

প্রতারণার অভিযোগে মামলার পর ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা অভিযানের পর তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আবেদনে বলা হয়, ইভ্যালির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ৩৩ হাজার ৩০৮ টাকায় স্যামসাংয়ের একটি ওয়াশিং মেশিন কেনেন ফরহাদ হোসেন। গত ৩০ ও ৩১ মে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করার পর ইভ্যালি থেকে একটি রশিদও দেওয়া হয় অনলাইনে।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পণ্য বুঝে না পেয়ে যোগাযোগ করলে ইভ্যালি থেকে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এতদিনেও তিনি পণ্য বুঝে পাননি, তাকে টাকাও ফেরত দেয়নি ইভ্যালি। 

তার আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিষয়ে প্রতিকার না পেয়ে এবং ভবিষ্যতে প্রতিকার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে তিনি ইভ্যালির অবসায়ন, ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আদালত আবসায়ন প্রশ্নে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন। পাশাপাশি ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি-হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।”

গাড়ি, মোটরসাইকেল, গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন বিলাসী পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের নজরে এসেছিল ইভ্যালি।

তাদের চমকদার ‘অফারের’ প্রলোভনে অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়।

কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া তাদের টাকাও ফেরত দেয়নি।

এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।

আবার ইভ্যালিতে পণ্য সরবরাহ বিভিন্ন কোম্পানিও টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছে। এরকম অনেকেই মামলা করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত তাদের দায়দেনার পরিমাণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা।

তবে ইভ্যালির এমডি রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলেছিল, বাস্তব অবস্থা আরও খারাপ। ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল তাদের বলেছেন।

পুরনো খবর