প্লাস্টিক ‘রিসাইক্লিং’ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা আরএফএলের

দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ বা রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের পরিমাণ মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 04:24 PM
Updated : 13 Sept 2021, 04:26 PM

আর সেই লক্ষ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ জেলায় জেলায় বাতিল প্লাস্টিকের সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে চাইছে বলে জানালেন এ কোম্পানির বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল।

বিদেশ থেকে আমদানি করা রেজিন ও অন্যান্য প্লাস্টিক দানা থেকে উন্নত মানের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০ হাজার টন পুরোনো ও বাতিল প্লাস্টিক সংগ্রহ করে আরএফএল, যা দিয়ে ২৭ হাজার টন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়।

কামরুজ্জামান কামাল জানান, রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে যে প্লাস্টিক কাঁচামাল তারা পান, তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে গেলে লাগত প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বলা যায়, পুরনো বা বাতিল প্লাস্টিক সামগ্রীর পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ওই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার সশ্রয় হচ্ছে। 

বাংলাদেশে প্রায় চার হাজার কোম্পানি প্রতিবছরে ২৪ লাখ টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ টন প্লাস্টিক পণ্যের যোগান আসে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কারখানা থেকে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গৃহস্থলী পণ্য, পাইপ ও ফিটিংস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও খাদ্যপণ্যের প্যাকেজিং।

২০১২ সাল থেকে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিংয়ে যুক্ত আছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশে আরও কয়েকটি কোম্পানি অকেজো প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে নতুন পণ্য তৈরি করছে।

দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরসহ মোট ১৩টি জেলা শহরে আরএফএলের প্লাস্টিক সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে। নরসিংদীর ঘোড়শাল দুটি আর হবিগঞ্জে একটি কারখানায় প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং পণ্য প্রস্তুত করে আরএফএল।

হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আরএফএল প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং প্রকল্পের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে এমন পণ্যই তৈরি করা হয়, যেগুলো মানুষের খাদ্য সমাগ্রীর সংস্পর্শে আসে না এবং খুব বেশি ভারও বহন করে না “

“ওয়েস্টেজ বিন, গার্ডনিং পট, হ্যাংগার, মোড়া, চেয়ার, বেলচা, পোল্ট্রি খামারের পট ও ব্যাগসহ প্রায় ১০০ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয় এই প্লাস্টিক থেকে, যা দামেও কিছুটা স্বস্তা।”

ঢাকার একটি ভাঙ্গারির দোকানে প্রতিকেজি বাতিল প্লাস্টিক যেখানে মাত্র ২০ টাকায় সংগ্রহ করা হচ্ছে, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলো তা কিনে নিচ্ছে মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়।

একজন ফেরিওয়ালা মাত্র ২০ টাকা দামের এক কেজি বাতিল প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে যতটা শ্রম দিচ্ছেন; তাতে সর্বোচ্চ ৫ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। কিন্তু ভাঙ্গারি দোকানিরা কেনা দামের প্রায় তিনগুণ দামে এসব বাতিল পণ্য মোকামে বিক্রি করতে পারছেন।

কামরুল হাসান বলেন, পুনঃপ্রকিয়াকরণ কেন্দ্র বা রিসাইক্লিং সেন্টারে আসার আগে পুরোনো বা বাতিল প্লাস্টিক পণ্যগুলো বার বার হাত বদল হয়। আর সে কারণেই তৃণমূল পর্যায়ে যে ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসব প্লাস্টিক সংগ্রহ করছেন, তারা দাম পাচ্ছেন অনেক কম।

বাংলাদেশে বছরে গড়ে মাথা পিছু ১৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। আর বিশ্বে মাথাপিছু গড়ে ব্যবহৃত হয় ৬০ কেজি প্লাস্টিক। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানের মত উন্নত দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ১০০ কেজির বেশি।

ব্যবহারের সহজলভ্যতা, হাল্কা ওজন ও অন্যান্য সুবিধার কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

কামরুজ্জামান কামাল বললেন, প্লাস্টিক পণ্যের ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই তারা রিসাইক্লিংয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে চান। এখন তাদের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ যেখানে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে হয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা ২০ শতাংশে নিতে চান তারা।

“শিগগিরই আরও নতুন ১০টি সংগ্রহ কেন্দ্র করা হবে। অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি জেলা শহরে খোলা হবে সংগ্রহ কেন্দ্র। তখন তৃণমূল পর্যায়ে পুরোনো প্লাস্টিকের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।”

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং খাতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এ পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রায় ৩২০ কোটি টাকা। এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে দুই হাজার এবং পরোক্ষভাবে চার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।