উন্নয়নশীল বাংলাদেশকেও ‘বাণিজ্য সুবিধা’ দেবে ইইউ

২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের সারিতে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের জন্য চলমান বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2021, 01:53 PM
Updated : 12 Sept 2021, 01:53 PM

রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাতে তিনি এ আশ্বাস দেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে।

প্রয়োজনীয় তিনটি শর্ত পূরণ হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এখন অন্তর্বর্তীকালীন সময় চলছে; সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে নতুন পরিচয় লাভ করবে।

সেই পরিচয়ের অর্জনের পর বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে, বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি আগ্রহী হবেন বিদেশিরা। কিন্তু একই সঙ্গে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে এতোদিন উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া কিছু সুযোগ-সুবিধার বিলোপ ঘটতে পারে।

মহামারীর ধাক্কা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো যেন চলমান থাকে সেজন্য দেন-দরবার করার কথা বলে আসছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা।

রোববারের বৈঠকে ইইউ দূতের সঙ্গে সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই আলোচনা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে আসছে; সেজন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। আগামী ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে দেওয়া বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি।”

বাংলাদেশের রপ্তানির বৃহৎ বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ। প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকের সিংহভাগই স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলোতে যায়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরবর্তী ১২ বছর এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চেষ্টা চালাচ্ছে। এলডিসি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজন্য বাংলাদেশের পক্ষে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি। এছাড়া এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধা আদায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে বেশ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশকে দেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সুবিধা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ দক্ষতার সাথে কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা মোকাবেলা করছে।

বাংলাদেশে চার বছর দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি চমৎকার ও সম্ভাবনাময় একটি দেশ। আগামী দিনেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চলতি করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও কর্মবান্ধব। কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষই খুশি।

বৈঠকে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) হাফিজুর রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।