এরপর ওই ট্রাক থেকে অনেক লম্বা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষদেরকে পণ্য কিনতে দেখা যায়।
এসময় ছবি তুলতে গেলে এক নারী লাইন থেকে সরে যান। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে ওই নারী বলেন, “ভাই, এখান থেকে কিনতে এসেছি, এ ছবি যদি প্রকাশ পায় তাহলে তো আত্মীয়-স্বজন দেখে ফেলবে, লজ্জা হবে।
“কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম এত বেশি যে, এখান থেকে না নিয়ে উপায় নেই। ছবি পত্রিকায় দিয়েন না।”
সোমবার গৃহিণী ওই নারী জানান, তার স্বামী করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক বছর বেকার থাকার পর কয়েক দিন আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। অর্থের টানাটানির মধ্যেই আছেন তারা।
রামপুরার এই পয়েন্টে পণ্য কিনতে আসা একটি দর্জি দোকানের কর্মী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “এখান থেকে একটু কম দামে পাওয়া যায় বলে মাঝে মাঝে কিনে থাকি। কিন্তু যেদিন একটু দেরি করে আসব, সেদিন আর পাওয়া যাবে না। মানুষের লম্বা লাইন শেষ হয় না, এর আগেই পণ্য শেষ হয়ে যায়।”
শুধু রামপুরা নয়, বাজারে নিত্য-পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ন্যায্যমূল্যে তেল, ডাল, চিনি কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাক ঘিরে লোকজনের ভিড় দেখা গেছে।
শুধু সোমবার নয়, প্রায় প্রতিদিন সকালে থেকেই এসব পণ্য কিনতে নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে স্বল্প আয়ের লোকজনসহ নানা পেশার মানুষকে অনেক আগে থেকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেওয়া লকডাউনের সময় ট্রাকগুলো ঘিরে পণ্য কিনতে যেমন লম্বা লাইন ছিল, সেই ভিড় দেখা না গেলেও এখনও বহু মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হচ্ছে বলে ক্রেতা ও ডিলাররা জানিয়েছেন।
এমনিতেই ভোজ্যতেলের দাম অনেক বেশি। এরমধ্যে রোববার ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গেলেও তা অপরিবর্তিত রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে পাম তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়।
প্রতি লিটার পাম তেলের দাম এখন খুচরায় ১১৬ টাকা, যা আগে ছিল ১১২ টাকা। খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম আগের মতই প্রতি লিটার ১২৯ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৫৩ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭২৮ টাকা।
টিসিবির একাধিক ডিলার জানান, ট্রাকে করে বিক্রির জন্য ডিলারদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। ট্রাক পৌঁছানোর আগেই বিক্রির জন্য নির্ধারিত পয়েন্টগুলোতে লোকজন অপেক্ষায় থাকেন। যে কারণে বিক্রি শুরুর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পণ্য শেষ হয়ে যায়।
তখনও অনেক ক্রেতা উপস্থিত থাকলেও তাদের হাতে পণ্য দেওয়ার মত অবস্থা থাকে না। প্রতিদিনই বহু মানুষ ট্রাকের সামনে এসেও পণ্য না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন বলে বলে তারা উল্লেখ করেন।
রামপুরা বাজার এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করা ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফুয়াদ এন্টারপ্রাইজ।এর বিক্রয়কর্মী আলাউদ্দিন বলেন, “আমরা প্রতি ক্রেতার মধ্যে সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল এবং দুই কেজি করে ডাল ও চিনি বিক্রি করছি। কাউকে এর চেয়ে বেশি দিচ্ছি না।
“এই পরিমাণ দেওয়ার পরও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পণ্য শেষ হয়ে যায়। পরে লাইনে থাকা বহু লোকজনকে দেওয়া সম্ভব হয় না।”
সোমবার মালিবাগ মোড়ে হোসাফ টাওয়ারের সামনে মেসার্স নাজাফ জেনারেল স্টোর টিসিবির পণ্য বিক্রি করে।
এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও টিসিবির ডিলার আশরাফ আলীর প্রতিনিধি মামুন খান বলেন, তেল, ডাল, চিনি মিলে তাদের মোট এক হাজার ৫০০ কেজি পণ্য বরাদ্দ ছিল।
“সকাল ১১টায় ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়, দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। কারণ ক্রেতারা আগে থেকেই সেখানে লম্বা লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন। বরাদ্দ শেষ হয়ে যায় বলে প্রায় প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০ জন খালি হাতে ফেরত যায়।”
লকডাউনের সময়ের চেয়ে এখনকার উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন বলেন, “সেই সময়ের ভিড় আর বর্তমান সময়ের ভিড়ে তেমন তফাৎ নেই, হয়ত ১৯/২০ হবে। টিসিবির পণ্যের দাম কিছুটা কম বলে অনেকেই কিনতে আসে। নির্ধারিত পরিমাণ বরাদ্দ থাকায় চাহিদা থাকলেও মানুষের অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব হয় না।”
প্রতিটি ট্রাকে সাধারণত ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি চিনি ও ৪০০ কেজি মশুর ডাল বরাদ্দ ছিল, তবে বেশি চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় এই বরাদ্দ বেশি ছিল। গড়ে প্রতিটি ট্রাকে এক হাজার ৬০০ কেজি বরাদ্দ ছিল বলে জানান এ কর্মকর্তা।