চীনে রপ্তানি বাড়াতে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২০ শতাংশ পণ্য আমদানি করে যে দেশ থেকে, সেই চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ শতাংশেরও অনেক নিচে।

ফয়সাল আতিকনিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2021, 06:33 PM
Updated : 8 Sept 2021, 08:23 AM

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি করা ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য মধ্যে চীন থেকে এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে একই বছর চীন সারাবিশ্ব থেকে ২৪০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশ দেশটিতে পাঠাতে পেরেছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

দীর্ঘদিন থেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন- বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে এত রপ্তানি করে কারা? বাংলাদেশ কী পারবে সেখানে কোনো অবস্থান তৈরি করতে?

এমন প্রশ্ন সামনে রেখেই দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে কয়েক বছর থেকে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা চলছে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়, ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

দুই দেশের মধ্যে এমন বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চালু করেছে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ মনে করেন, এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে অবশ্যই একটা আগ্রহের সৃষ্টি হবে।

“সবাই এখন চীনের বাজারে রপ্তানি করা যায় এমন পণ্যের দিকে মনোযোগী হবেন। কারও সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে তা দূর করার প্রস্তুতি নেবেন।“

রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে ‍বিনাশুল্কে রপ্তানির এই সুযোগ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে তাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলমান।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট- পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি ঢাকায় এক আলোচনায় বলেন, যেহেতু চীনের সার্বিক আমদানি বাজারের আকার ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়েও বড় তাই বাজারে সার্বিক অংশিদারিত্ব সামান্য বাড়াতে পারলেই টাকার অংকে সেটা অনেক বড় কিছু হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পণ্য চীন থেকে আমদানি হলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যের তালিকায় চীনের অবস্থান পঞ্চদশ।

গত পাঁচ বছর ধরে দেশের প্রধান এই বাণিজ্য সহযোগীর সঙ্গে ঘাটতি ১ অনুপাত ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১ অনুপাত ২০ পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি সক্ষমতা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে চীনে রপ্তানি বহুগুণে বাড়াতে পারে বাংলাদেশ।

এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের মনযোগ, চীনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং, শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগানো এবং টেস্টিং ল্যাবসহ দেশীয় শিল্পের গুণগত মানের উন্নয়ন।

পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক রাজ্জাক বলেন, চীনের আমদানি বাজারের মাত্র ১ শতাংশ দখল নেওয়া গেলে বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুড়িতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক রাজ্জাক একটি ‘গ্র্যাভিটি মডেল’ দাঁড় করিয়ে দেখিয়েছেন, চীনে রপ্তানির পরিমাণ এখনকার এক বিলিয়ন ডলার থেকে আরও চার বিলিয়ন ডলার বাড়ানো সম্ভব।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার আইটিসির আরেক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশ বর্তমানে চীনে তার রপ্তানি সক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে। একদিকে যেমন সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব, আবার চীনের অভ্যন্তরীণ আমদানি বাজার বড় হতে থাকায় নতুন সুযোগও তৈরি হবে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সচল ঢাকার মিরপুরের একটি পোশাক কারখানা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সক্ষমতাই চ্যালেঞ্জ

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চীনে রপ্তানিতে দারুণ এক অগ্রগতি দেখেছে বাংলাদেশ। সে বছর ৯৪৯ মিলিয়ন বা প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। ওই সময় আমদানি হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে কয়েক দশকের মধ্যে ১ অনুপাত ১০ হয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। যেখানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৮৩১ মিলয়ন ডলারের পণ্য।

পরের অর্থবছর মহামারীর কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ১২ বিলিয়নে নামে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুই সংখ্যার এইচএস কোড বা চ্যাপ্টারের হিসাব ধরলে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৯৮ ধরনের পণ্য চীনে রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক (প্রায় ৬০ শতাংশ)।

তালিকায় আরও রয়েছে, পাট, পাটের সুতা ও টেক্সটাইল সুতা (এইচএস ৫৩), মাছ, কাকড়া-কুচিয়া, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সবজি, চা, কফি, তৈলবীজ, চার্বিসহ অন্যান্য পণ্য।

কী ভাবছেন রপ্তানিকারকরা

প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশটির উচ্চমাত্রার উৎপাদন সক্ষমতা।

“চীনের মত দেশে রপ্তানি করতে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে এবং সেটা এখন দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি দেশটি পোশাক তৈরির শিল্প থেকে কিছুটা সরে আসছে। ফলে আমরা বেশ আশাবাদী।“

ভবিষ্যতে চীনের কিছু ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে যুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান ফারুক হাসান।

চীনে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিকারক ওহাব অ্যান্ড সন্সের স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের অধিক দরকষাকষির সক্ষমতা। বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকায় দরকষাকষিতে তারা বেশি এগিয়ে।

“পর্যাপ্ত মুনাফা না পাওয়ার কারণে চাইলেও সেখানে রপ্তানি করা যায় না। চীনের সঙ্গে ভাষার সমস্যা তো আছেই। পাশাপাশি তাদের কোনো কোনো ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই পেমেন্ট নিয়ে প্রতারণা করে বসে।“

অবশ্য অনেক ব্যবসায়ী সেলিম রেজার উল্টো কথাও বলেছেন। চীনের ব্যবসায়ীরা লেনদেনে অত্যন্ত ‘স্বচ্ছ্ব’ বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

প্রয়োজন মনোযোগ

চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, সেদেশের বাজারে বিপণন করার মত পণ্য বাংলাদেশে খুব কমই উৎপাদিত হচ্ছে। তবুও সেখানে যেসব সুযোগ রয়েছে তা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন না।

“এবছরই চীনে চারটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি কম। সাংহাইতে যে মেলা হবে সেখানে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে বিনামূল্যে প্যাভিলিয়ন দেবে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো থাকবে কিনা সেটা হচ্ছে বিষয়।“

চীনে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, “ছোট করে হলেও সেখানে একটি শাখা অফিস চালু করা প্রয়োজন।

“কিন্তু বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো এই কাজগুলোতে খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছে না। যারা পড়াশোনা বা অন্যান্য ভিসায় চীনে অবস্থান করছে, ভাষা জানেন, তাদের খণ্ডকালীন কমার্শিয়াল এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিলেও কিছু সুফল পাওয়া যাবে।“

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ সাধারণত তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর দেশ। আর পোশাকের মূল বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা নিয়ে শিল্প মালিকরা বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় চীন গুরুত্ব হারিয়েছে। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের শূল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। কিন্তু এর পরই মহামারী শুরু হওয়ায় এর প্রকৃত সুফল এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রপ্তানিকারক সোহেল এন ওয়াহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীনে বিভিন্ন পণ্যের যে পরিমাণ চাহিদা, রয়েছে আমাদের মত দেশের সেই পরিমাণ উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। এর মানে হচ্ছে যেটুকু উৎপাদন হবে তার পুরোটাই রপ্তানি সম্ভব। এখন উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে মনযোগ দিতে হবে।”

উৎপাদন বাড়ানো গেলে তা চীনে রপ্তানি করতে কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা নেই বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী। গত বছর চীনে ৪০০ টন তেল রপ্তানি করেছেন তিনি।

আশা জাগাচ্ছে তৈরি পোশাক

বিশ্ব বাণিজ্যের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে গবেষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চীনে সারাবছর যে পরিমাণ পোশাক আমদানি করে, তাতে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব মাত্র শুন্য দশমিক ০৫ শতাংশ।

বর্তমানে চীনে ৩২২ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজার রয়েছে। এ বাজার দিন দিন যেভাবে বড় হচ্ছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক পোশাকের বাজার ৩৭০ বিলিয়নকে ছাপিয়ে যেতে বেশিদিন লাগবে না।

দেশটির পোশাক বাজারের মধ্যে নিট পণ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ৭ শতাংশ এবং উভেনে ৮ শতাংশ। কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

মহামারী শুরুর আগের ৫ বছরে চীনে রপ্তানিতে গড়ে বার্ষিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওই বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সারাবিশ্বে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনমানের প্রবৃদ্ধির গতি আরও বেশি।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউরোপ আমেরিকার মত চীনেও কিছু স্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ড রয়েছে, যারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি পাশের দেশগুলো থেকে আমদানি করে। আমরা এ ধরনের কয়েকটি ব্র্যান্ডকে বাংলাদেশে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছি।

“বাংলাদেশ কটনপণ্যের পাশাপাশি সম্প্রতি ম্যানমেইড ফাইবারের তৈরি পণ্যের দিকে নজর দিয়েছে। এই খাতে সক্ষমতা বাড়াতে পারলে তা চীনা বাজার ধরতে সহায়কই হবে “

একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্য রপ্তানির চেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চীনে কিছু উচ্চ মূল্যের পোশাকের চাহিদা রয়েছে যেগুলো এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। সেগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়ে চীনে যাচ্ছে। যেমন আরমানি পণ্য। চীনের ধনীরা ফ্রান্স ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক পরেন। “

কাঁকড়া রপ্তানি ফের শুরু

জীবন্ত মাছ, কাঁকড়া ও কুচিয়াসহ এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ২০১৮-২০১৯ সালে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আয় করে বাংলাদেশ। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী শুরু ও প্রত্যয়নপত্র নিয়ে জটিলতার কারণে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রায় ৯ মাস কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি বন্ধ থাকে।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিয়াজ উদ্দিন জানান, পণ্যের মান নিশ্চিত করা ও সনদ জালিয়াতি ঠেকানোসহ চীনের দেওয়া বেশকিছু শর্ত পূরণের পর গত ২ জুন থেকে নতুন করে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

নতুন করে ল্যাবরেটরি স্থাপন করে এসব পণ্য পরীক্ষা করে চীনে পাঠানো হবে। ফলে আর কোনো জটিলতা থাকবে না বলে তিনি জানান।

নতুন সুবিধার জায়গা কই?

ইপিবির পলিসি বিভাগের উপ পরিচালক কুমকুম সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীন ডিউটি ফ্রি পণ্যের পরিধি বাড়ালেও তাতে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত রপ্তানি হয় এমন সব পণ্যের ট্যারিফ লাইনের আওতা খুব একটা বাড়েনি।

“গত বছর বাংলাদেশ থেকে যে ৯৮ ধরনের (দুই ডিজিটের এইচএস কোড) পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার অধিকাংশ দীর্ঘদিন ধরে চীনের বাজারে ডিউটি ফ্রি সুবিধা পেয়ে আসছে।“

তবে মৎস্য ও ওষুধ পণ্য রপ্তানিতে সুবিধা কিছুটা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে মাছের ক্ষেত্রে ৩২৭টি ট্যারিফ লাইনে ডিউটি ফ্রি সুবিধা ছিল, এখন সেটা বেড়ে ৩৩৮টি হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রে আগে ৮৮টি ট্যারিফ লাইনে সুবিধা ছিল এখন সেটা বেড়ে ১৩৮টিতে দাঁড়িয়েছে।

ট্যারিফ লাইন

বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হওয়া বহুল প্রচলিত পণ্যের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের ট্যারিফ লাইন আগেও ১৬৬ ছিল, ২০২০ সালের ঘোষণার পরও সেটা একই রয়েছে।

পোশাকের মধ্যে ২০২০ সালের ঘোষণার পরও নিট পোশাকের ১৩১টি ট্যারিফ লাইন, ওভেনের ১৬৬টি এবং হোম টেক্সটাইলের ১০২টি ট্যারিফ লাইনে নতুন কিছু যুক্ত হয়নি।

চামড়ার জুতা, পাদুকা ও এধরনের পণ্যে ৩৮টি ট্যারিফ লাইনের সঙ্গে নতুন করে ৪টি পণ্য যুক্ত হয়েছে।

সিরামিক পণ্যে আগের মতই ৩৭টি ট্যারিফ লাইন, ইলেক্ট্রেনিক্স পণ্যে ৫২৫টি, মোটরসাইকেলে ১১টি, বাইসাইকেলে ৬টি, ফার্নিচারে ৬২টি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ৫৯টি ট্যারিফ লাইনে ডিউটি ফ্রি সুবিধা অপরিবর্তিত রেখেছে চীন।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, চীনের ট্যারিফ লাইনের ডিউটি ফ্রি সুবিধা ৬১ শতাংশ থেকে গত বছর জুলাইতে বাড়িয়ে ৯৭ শতাংশ করা হয়েছে। এটা অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক।

আরও পড়ুন