শঙ্কার সময়ে কারখানায় যোগ দিলেন শ্রমিকরা

করোনাভাইরাস ঠেকানোর কঠোর লকডাউনের মধ্যে নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে অগাস্টের প্রথম দিন থেকে ঢাকার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 07:05 AM
Updated : 1 August 2021, 07:05 AM

রোববার প্রথম দিন শ্রমিকদের অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকেই কর্মস্থলে ফিরতে ঢাকার বাইরে থেকে এখনও আসছেন।   

ঈদের আগের লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিল্প কারখানা চালু ছিল।

করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে কোরবানি ঈদের পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়।

তবে রপ্তানিমুখী শিল্পের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ১ অগাস্ট থেকে পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার অনুমতি দেয় সরকার।

রাজধানীর কমলাপুরে রোববার একটি পোশাক কারখানায় জীবাণুনাশক টানেল পেরিয়ে কর্মস্থলে ঢুকছেন কর্মীরা।

ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের ফিরে আসার সুবিধার্থে সাময়িক সময়ের জন্য দূরপাল্লার গণপরিবহনও চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রোববার রাজধানীর ভেতরেও রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসের পাশাপাশি দুচারটি নগর পরিবহনও চলাচল করতে দেখা গেছে।

কারখানা খোলার প্রথম দিন স্বাস্থ্যবিধি ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখতে মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় ঘুরলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ভেতরের পরিস্থিতি দেখাতে রাজি হয়নি। তবে অনেক কারখানাকে বিজিএমইএর নির্দেশনা মেনে সংক্রমণ প্রতিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।

কারখানা চালু করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে শনিবার রাতেই ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতবছর মার্চে মহামারী প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এই ধরনের হেলথ প্রটোকল বা নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

মিরপুরে ১১ নম্বরে রোববার একটি পোশাক কারখানায় ঢুকছেন কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় নাশা গ্রুপের একটি কারখানার সামনে গেলেও পরিদর্শনের সুযোগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রবেশমুখে ১০/১৫টি পানির কল থাকলেও ছিল না কোনো তাপমাত্রা মাপার মেশিন।

প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রনজিৎ কুমার নামের একজন কর্মকর্তা জানান, কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে, শ্রমিকরাও আসছে। তবে এই মুহূর্তে নিজস্ব লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।

“আমি যোগাযোগ করে দেখেছি। প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া এখন পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া যবেনা,” বলেন তিনি।

রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে রোববার জীবাণুনাশক টানেল পেরিয়ে পোশাক কারখানায় ঢুকছেন কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এ সময় কারখানায় ঢুকতে যাওয়া একজন নারী শ্রমিক বলেন, “আমি মাত্রই গ্রামের বাড়ি থেকে আসলাম। প্রথম দিনের হাজিরা নিশ্চিত করতে কারখানায় চলে আসলাম।”

সকাল ১০টার দিকে মিরপুর-৭ নম্বর আবাসিক এলাকায় জিতা অ্যাপারেলস নামের কারখানায় দেখা যায়, প্রবেশ পথে পানির নল বসিয়ে ডিটারজেন্টের মিশ্রণ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশপথে বসানো হয়েছে তাপমাত্রা মাপার মেশিন।

এখানে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হারিছ মিয়া জানান, প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের এই কারখানার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কর্মী চলে এসেছেন। প্রথম দিনে উৎপাদন শুরু না করে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সারবেন তারা।

“বিকাল ৩টার মধ্যেই কারখানা ছুটি হয়ে যাবে। সাধারণত ওভার টাইমসহ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারখানা চলে। আমাদের কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের সব ব্যবস্থাই রয়েছে। দুপুরে ক্যান্টিনে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করি তেমন অসুবিধা হবেনা,” বলেন হারিছ।

একই এলাকায় রিও ফ্যাশন নামের আরেকটি কারখানায় ঈদের ছুটির আগে প্রায় ১৪০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলেছিল। রোববার প্রথম দিনে তাদের অধিকাংশই উপস্থিত হয়েছেন।

এই কারখানার মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান নাঈম শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিনে ৩৪৬ জন শ্রমিক অনুপস্থিত। কিন্তু এটিই চূড়ান্ত হিসাব নয়; কমবেশি হতে পারে।

রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে রোববার একটি পোশাক কারখানায় ঢোকার আগে কর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে । ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকই কারখানার আশপাশে থাকেন। ফলে লকডাউনের কারণে অনুপস্থিতির হার খুব একটা বেশি নয়। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে যতটা সম্ভব আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। কারখানায় প্রচুর কাজের অর্ডার পড়ে আছে। তাই মালিক-শ্রমিক কেউই কাজ বন্ধ রাখার পক্ষে নন,” বলেন নাঈম শিকদার।

তিনি বলেন, “এটি একটি সচল কারখানা। গত দুই বছর ধরে এখানে নিয়মিত বেতন হতে দেখছি। এখানকার কর্মীরাও বেশ উদ্যোমী। মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জেনেও তারা কাজ করতে আগ্রহী।”

একই এলাকায় ব্রানারসন এক্সপোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসএইউ ফ্যাশনেও শ্রমিকদের আনাগোনা দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত অসংখ্য শ্রমিক কারখানার নিচ তলায় অবস্থান নিলেও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা তখনও আসেননি।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কেউ না আসায় ভেতরের পরিবেশ দেখার মতো অবস্থা হয়নি।