আমলাদের দুর্নীতি কমলেও নিম্নস্তরে রয়ে গেছে: সালমান এফ রহমান

উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের প্রতি জনসাধারণের আস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2021, 05:23 AM
Updated : 27 July 2021, 05:29 AM

নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলে হোটেলের এম্পায়ার বলরুমে সোমবার ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

সম্মেলনে সালমান এফ রহমান ছিলেন সম্মানীত অতিথি এবং সামগ্রিক অবস্থার আলোকে নীতি-নির্ধারনী মতামতও দেন তিনি। দুই পর্বে বিভক্ত এই সম্মেলনের প্রথমেই ছিল বিনিয়োগে আগ্রহী প্রবাসীদের নিয়ে আলোচনা।

শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, “বাংলাদেশকে এখন আর কেউ হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও এবং দুর্ভিক্ষের দেশ মনে করে না। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির এই অদম্য গতিকে ত্বরান্বিত করতে দরকার বেশি বিনিয়োগ।”

এতে অংশ নিয়ে সালমান রহমান বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে দুর্নীতি অনেকাংশে কমেছে। বিশেষ করে টেন্ডারবাজি এবং টেন্ডার সাবমিটের সময়ে গোলাগুলি, খুনা-খুণী-হানাহানী আর ঘুষ-দুর্নীতি ও দল প্রীতির ঢালাও যে অভিযোগ ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে।

“বিশেষ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা একেবারেই কমে এসেছে। তবে গ্রাউন্ড লেবেলে এখনও ঘুষ-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে, এটা বলতে দ্বিধা নেই।”

এই শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আরও বলেন, “বাংলাদেশের পার্লামেন্টে বিরোধী দলের সদস্য খুব বেশি না থাকলেও গণতান্ত্রিক চর্চা সঠিকভাবেই করা হচ্ছে। সকলেই নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করছেন। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনাতেও সরব রয়েছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। এভাবেই সঠিক ট্র্যাকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।”

নিউইয়র্কে বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশনেয়া ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আর বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, “জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সব সূচকেই বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বীকৃতি আসছে। এতে প্রবাসীদেরও অশেষ অবদান রয়েছে তা স্বীকার করছি অকপটে এবং সকল প্রবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। উন্নয়নে প্রবাসীরা এগিয়ে গেলে নিজেরাও লাভবান হবেন। কারণ, বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগকারীরা ১০ বছরের জন্যে ট্যাক্স মওকুফের সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারের সর্বস্তরে সহযোগিতার দিগন্ত প্রসার করা হয়েছে। বিদেশি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্যে উইন-উইন সিচ্যুয়েশন বিরাজ করছে বাংলাদেশে।”

কক্সবাজারে বিশ্ব মানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার পাশাপাশি মিরসরাইসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ চলছে। এসব স্থানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

দ্বিতীয় পর্বে মার্কিন বিনিয়োগকারিরা অংশ নেন। সেখানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ন্যাশনাল ইকনোমিক কাউন্সিলের পরিচালক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের অর্থমন্ত্রী হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এমিরিটাস লরেন্স হেনরি সামারস।

লরেন্স গত ১২ বছরে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় উন্নয়ন-অভিযাত্রার বিবরণ তুলে ধরেন।

দিনব্যাপী কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম প্রমুখ। এনআরবি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ, ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ, জাকারিয়া মাসুদ জিকো প্রমুখ।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, ক্যালিফোর্নিয়ার লসএঞ্জেলেস এবং সিলিকন ভ্যালিতেও আরও তিনটি সম্মেলন হবে।