এবার কোরবানির পশুর ২৫% অনলাইনে বিক্রির লক্ষ্য

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জনসমাগম এড়াতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকাটার ওপর জোর দিয়ে দেশে মোট পশুর ২৫ শতাংশ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস থেকে বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2021, 09:12 AM
Updated : 15 July 2021, 09:12 AM

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. দেবাশীষ দাশ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “মন্ত্রী মহোদয় এক মিটিংয়ে বলেছেন- পুরো বিক্রিটাই যেন অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারি। তবে তা না হলেও আমাদের টার্গেট ২৫ শতাংশ পশু এবার অনলাইনে বিক্রি হবে।”

অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনায় ক্রেতা ও খামারিদের এক প্ল্যাটফর্মে আনতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে digitalhaat.net নামে চালু করা হয় ‘দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট’।

চলতি বছর দেশে এক কোটি ১৯ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এবার ১ হাজার ৮৪৩টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেকর্ড সংখ্যক পশু অনলাইনে বিক্রি করার আশা করছে সরকার।

বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এক হাজার ৭৭৮টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দুই লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩টি পশু বিক্রি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য এক হাজার ৫১১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮২২ টাকা।

এখন পর্যন্ত অনলাইনে সারাদেশে বিক্রি হওয়া পশুর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ এক লাখ ২৬ হাজার ৪৬৫টি পশু বিক্রি হয়েছে। আর ঢাকা বিভাগে বিক্রি হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৮৫১টি পশু।

অনলাইনে পশু বিক্রিতে গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বিভাগ এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাশ।

তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে দেখছি দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে অনলাইনে চট্টগ্রাম বিভাগে বিক্রি বেশি হয় । এবারও সেই ধারাবাহিকতা দেখতে পাচ্ছি।”

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬০টি গরু-মহিষ বা ছাগল-ভেড়ার ছবি ও তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবারই আপলোড হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১টি। সেদিন বিক্রি হয়েছে ২৯ হাজার ৯৭টি পশু, যার মূল্য ১৮৩ কোটি ৮ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬ টাকা।

এদিকে অনলাইনে বিক্রি হওয়া পশু পরিবহনের সময় কোনো ‘খাজনা’ বা ‘হাসিল’ আদায় না করার জন্য বুধবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

তাতে বলা হয়, “সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, অনলাইনে বিক্রয়কৃত পশু পরিবহনকালে ক্রয়কারীর নিকট পৌঁছানোর সময় নিকটবর্তী হাটবাজারের ইজাদার ও মহাসড়ক সংলগ্ন হাটের ইজারাদার কর্তৃক হাসিল দাবি করা হয়।”

হাট-বাজারের জন্য নির্ধারিত ‘পরিধি’ ছাড়া গবাদি পশু/পণ্য কেনাবেচায় হাসিল আদায়ের সুযোগ নেই উল্লেখ করে আদেশে বলা হয়, “অনেক সময় জোর পূর্বক গবাদি পশু নামিয়ে রাখা হয়, যা কোনোক্রমে কাম্য নয়।”

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু কেনা-বেচায় যাতে হাসিল বা অন্য কোনো চাঁদা আদায় করা না হয় সে বিষয়ে হাটবাজার নীলামকারী ও নীলাম গ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বুধবার সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সভায় অনলাইনে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হয়রানি না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, “অনলাইনে বিক্রি হওয়া কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে যাদের প্রমাণাদি আছে, তাদেরকে যাতে পথে হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“হয়রানি করলে সেটা চাঁদাবাজি হবে, ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”

‘কোরবানির পশুর বিপণনে বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা এবং প্রাণিজ পণ্যের বিপণন’ শীর্ষক ওই সভায় বাজারের নির্ধারিত এলাকার বাইরে পশু পরিবহন ও বিক্রয়ে কোনোভাবেই হাসিল আদায় করা যাবে না জানিয়ে সতর্ক করেন মন্ত্রী।