এমন পরিস্থিতিতে তারা পরিবহন খাতের জন্য সরকারের কাছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফ চেয়েছেন।
লকডাউনে পরিবহন খাতের অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা এবং বাস মালিকদের অনেকেই বললেন, সরকার এগিয়ে না এলে তাদের বর্তমান ‘অসহায়’ অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দেশে বাস ট্রাক মিলে প্রায় চার লাখের মত গাড়ি রয়েছে। আর মালিক রয়েছেন প্রায় দুই লাখের মত। লকডাউনের প্রায় পুরো সময়ে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এই বিপুল সংখ্যক মানুষ চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
“একদিকে আয় নেই, দিতে হচ্ছে ব্যাংক ঋণের কিস্তি, শ্রমিকদের চাহিদা পূরণ, এসব মিলে পরিবহন মালিকরা এখন দিশেহারা।”
তার দাবি, তাদের চেয়েও ‘অসহায়’ হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের দিকটাও ভাবতে হচ্ছে মালিকদের। কারণ তাদের জীবন জীবিকা যুক্ত পরিবহনের সঙ্গে। তারা আর্থিক অভাবে পড়লে যাচ্ছেন মালিকদের কাছেই। এক্ষেত্রেও যে যেভাবে পারছেন শ্রমিকদের সহায়তা করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনা পরিবহনের কর্ণধার এনায়েত উল্লাহ আরও বলেন, “অন্যদিকে অনেকের নিজস্ব গ্যারেজ না থাকায় গাড়ি রাস্তার পাশে বা অন্য কোথাও অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি ব্যাংক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে। আয় না থাকায় দায় শোধ করতে পারছি না। তাই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত এসব ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা হোক।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত পরিবহন খাতে মোট ঋণ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে কোভিডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় পরিবহন খাতের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।
তবে গত মে মাসে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দিতে ১০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (রিফাইন্যান্স স্কিম) গঠনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
এ বিষয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই স্কিম থেকে ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন সুশৃংখল করার একটি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হবে। তাদেরকেই মূলত ওই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে।”
ঋণের বোঝা আরও ভারি হওয়ায় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস ট্রাক মালিকদের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার দাবি জানান তিনি।
দেশে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হানিফ পরিবহন। এই কোম্পানির কর্ণধার মো. কফিল উদ্দিন হতাশা আর অভিমানের সুরে বলেন, “কারও কাছে কোনও সহযোগিতা চাই না। সমস্যা থাকলেও কাউকে বলছি না। আল্লাহ সমস্যা দিছে, সমাধানও তিনিই করবেন।”
প্রণোদনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার বাস মালিকদের জন্য আলাদা কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করেনি। উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্যাকেজ রয়েছে সেখান থেকে গণপরিবহন উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডিওএস) বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার যতদুর মনে পড়ে গণপরিবহন মালিকদের জন্য কোনও প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি।
“প্রণোদনা দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা শুধু নীতি সহায়তা ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে পারি। সরকার যদি এই খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়, তা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করব।”
আরও পড়ুন