লকডাউন: পাইকাররা যেতে না পারায় ‘দাম উঠছে না’ আমের

চলমান লকডাউনের মধ্যে পাইকাররা দেশের উত্তরে আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে যেতে না পারায় এবার আমের ‘দাম পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও বাগান মালিকরা।

সাদেকুল ইসলামঢাকা থেকে গোলাম মর্তুজা এবং নওগাঁ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 05:10 PM
Updated : 8 July 2021, 05:10 PM

দেশের অন্যতম শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁর আম বাজার হিসেবে পরিচিত সাপাহার ও পোরশার চাষি ও স্থানীয় ব্যাপারীরা বলছেন, বাইরের জেলা থেকে তুলনামূলক কম পাইকার এসেছেন এবার। ফলে গত বছরের চেয়ে ‘অনেক কম দামে’ আম ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার পাইকারি বাজারে আম্রপালী আম প্রতি মণ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হিমসাগর ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, ল্যাংড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, গোপালভোগ ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা এবং নাকফজলী ও ফজলী ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে।

নওগাঁয় আমের এই দর গত বছরের ‘অর্ধেক’ বলে সাপাহারের আম চাষি আবু বক্কর সিদ্দিকির ভাষ্য।

“পাইকার ও আড়তদাররা দাম দিতে রাজি না। বাধ্য হয়ে গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হলো। এর ওপর প্রতিমণে অতিরিক্ত দিতে হয় ৮ কেজি আম।”

এবার বেশিরভাগ চাষি আম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাবেন না বলে মন্তব্য তার।

সাপাহারের তুলশীপাড়ার আম চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, “গত বছর মৌসুমের একেবারে শেষে প্রতিমণ আম্রপালী ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কিন্ত এ বছর বাজার খুবই খারাপ।”

জেলার পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় এ বছর প্রায় তিন শতাধিক আড়তে আম কেনাবেচার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে এ বছর আমের সরবরাহ বেশি এবং ক্রেতা কম থাকায় দাম পড়ে গেছে বলে জানালেন সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন।

তিনি বলেন, “বাজারে প্রচুর সরবরাহ। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আমের চাহিদা কম, পাইকাররাও তুলনামূলক আম কম কিনছেন। এ কারণে আমের দামও কম। তবে গত কয়েকদিন ধরে দাম কিছুটা বেড়েছে।”

তিনি জানান, গত বছর আম্রপালি আমের মণপ্রতি দর শুরুই হয়েছিল তিন হাজার থেকে। সেটা ছয় হাজার পর্যন্ত উঠেছিল। এবার দাম এখনো তিন হাজার টাকাতেও ওঠেনি।

আমের আড়তদার ইমাম হোসেন রিফাত বলেন, লকডাউন শুরুর পর দাম অনেক পড়ে যায়। তবে গত ৪-৫ দিনে দাম কিছুটা উঠেছে। বর্তমানে প্রতিমণ আম্রপালী বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হজার ৮০০ টাকা মণ দরে।

নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, “মহামারীর মধ্যে আম বেচাকেনা বা পরিবহনে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাইরের পাইকাররা এবার কম এসেছে এ এলাকায়। সে কারণে দাম কিছুটা কম।”

গতবছর নওগাঁয় মোটামুটি তিন লাখ টনের মতো আম উৎপাদিত হয়েছিল, যা সারা দেশের মোট উৎপাদনের ১৫ শতাংশের মত।

এ বছর এ জেলায় গতবারের চেয়ে ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। তাতে উৎপাদন ৫০ হাজার মেট্রিকটন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন শামসুল ওয়াদুদ। এরইমধ্যে সাপাহার থেকে কয়েক মেট্রিকটন আম বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নওগাঁর মত ঠাকুরগাঁও ও রংপুরের আম চাষি ও ব্যাপারীরাও দম এবার কম পাওয়ার কথা বললেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের আম ব্যবসায়ী মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লকডাউন শুরুর পর জেলায় আম্রপালী আমের দাম কমে মণপ্রতি ৮০০ টাকায় নেমে আসে। এখন একটু বেড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

“তবে গতবারের তুলনায় দাম অনেক কম। গতবছর প্রতি মণ ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকাও পাওয়া গেছে।”

তিনি বলেন, “লকডাউনে পাইকাররা আসছে না বলে দাম উঠছে না। এমনিতে আম পরিবহনের কোনো সমস্যা নেই।”

রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙা আমের উৎপত্তিস্থল মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আমচাষী ও ব্যবসায়ী সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আম বিক্রি হচ্ছে, তবে দাম উঠছে না। কারণ ঢাকা থেকে পাইকাররা আসছে না সেভাবে।”

তিনি জানান, গত বছর প্রতিমণ আম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। এবার লকডাউন শুরুর পর দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় নামে। এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি বাড়ায়, দাম একটু বেড়ে প্রতিমণ ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদুল বলেন, “আগেরবার লকডাউনের মধ্যে আমের পাইকারদেরও যাতায়াতের সুবিধা করে দিয়েছিল সরকার। এবারও এমনটা করা হলে চাষিরা আমের নায্য দামটা পেতে পারেন।”