টেলিকম অপারেটরদের আয়ে নজরদারিতে প্রযুক্তি পাচ্ছে বিটিআরসি

টেলিকম অপারেটরদের থেকে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে বিটিআরসির জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ‘টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম’ কেনায় সায় দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2021, 11:05 AM
Updated : 16 June 2021, 11:05 AM

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জন্য টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম কেনায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল রেগুলেটরি মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান হওয়ার পর এ সিস্টেম কেনা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, এই সিস্টেম কেনা, উন্নয়ন, সরবরাহ, ইনস্টল, টেটিং ও কমিশনের জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা ব্যয় হবে।

কানাডার টিকেসি টেলিকম এ সিস্টেম সরবরাহ করবে বলে জানান তিনি।

এ সিস্টেমের কাজ কী হবে- জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “টেলিকম অপারেটরদের যে রাজস্বটা আদায় হচ্ছে, এক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক তথ্য নাও থাকতে পারে। এজন্য এ মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে শতভাগ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে এবং সে অনুযায়ী সরকারকে অপারেটদের অবহিত করতে হবে।”

রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে অপারেটর ও সরকারের মধ্যে নিরীক্ষা নিয়ে কয়েকবার টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল, যা গড়িয়েছিল আদালতেও। ভবিষ্যতে তা এড়াতেই এ সিস্টেম কেনা হচ্ছে।

বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়মিত ভিত্তিতে এবং কারিগরিভাবে সরকারের প্রাপ্য রাজস্বের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। এর মাধ্যমে দেশের যে কোনো স্থানে ভয়েস এবং ইন্টারনেট সেবার মান তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যাবে। এছাড়া মোবাইল অপারেটররা অনুমোদিত কলচার্জ প্রয়োগ করছে কি না, গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে কেটে রাখছে কি না, তা যাচাই করা যাবে।

এটি কারিগরি অডিট এবং কমপ্ল্যায়েন্স যাচাইসহ সব গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটরি ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, সরকার এ খাত থেকে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেয়ে থাকে।

২০১৯ সালে মোবাইল বাজারের রাজস্ব ছিল দেশের জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ এবং খাতটির কর ও ফির পরিমাণ ছিল মোট সরকারি কর রাজস্বের প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন জানান, বুধবারের সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের `শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবের জন্য ১০১ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৩৬ টাকায় মালামাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ইন্সট্রাক্টর টেবিল, ৫ হাজার ইন্সট্রাক্টর চেয়ার, ৮০ হাজার কম্পিউটার টেবিল এবং ১ লাখ ৬০ হাজার কম্পিউটার চেয়ার সংগ্রহ, সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। হাতিল কমপ্লেক্স (১টি লট), আরএফএল প্লাস্টিকস্ লিমিটেড (২টি লট), আকতার ফার্নিচার লিমিটেড (৩টি লট) এবং পারটেক্স ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১টি লট) কাজগুলো পেয়েছে।

পেট্রোবাংলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক্সালেরেট এনার্জি এলপি থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সর্বমোট ৩১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদনও দেওয়া হয় বৈঠকে।

এছাড়া পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ৫টি প্যাকেজের আওতায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের’ চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত কমার্শিয়াল চুক্তি এবং পার্টিকুলার কন্ডিশন চুক্তি এবং পেমেন্ট সিডিউলের কয়েকটি ক্লজ পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ প্রস্তাবে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “মূল চুক্তিপত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না, কিছু কাজ যা ওই কোম্পানি করত, তা বর্তমানে প্রকল্প থেকেই করা হবে।”

এছাড়া নৌপরিবহন কর্পোরেশনকে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স থেকে ২৩১ কোটি ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৬ টাকায় ৩টি যাত্রীবাহী ক্রুজ ভেসেল সরবরাহ ও নির্মাণ কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয় সভায়।

বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কাফকো থেকে ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৭ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অন-লাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোটরযানের কর ও ফি আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ২১৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৫ বছরের জন্য নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) এ কাজ পেয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।