খুচরা বিক্রয় খাতে ‘উপেক্ষিত’ নারী ও প্রতিবন্ধীরা: ব্র্যাকের জরিপ

নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা এবং সীমিত সামর্থ্যের ধারণার বশে খুচরা বিক্রয় খাতের নিয়োগকর্তারা নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মী হিসেবে নিতে অনাগ্রহী থাকেন বলে উঠে এসেছে ব্র্যাকের এক জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2021, 02:25 PM
Updated : 15 June 2021, 03:28 PM

মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই জরিপে দেখা যায়, শতকরা মাত্র ছয় ভাগ প্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক নারী রয়েছেন। অন্যদিকে, মাত্র দুই শতাংশ নিয়োগকারী তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কাজে নিতে চান।

গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ’খুচরা বিক্রয় খাতের দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যত’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালিত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে খুচরা বিক্রয় খাতের মোট ৭২০ জন উদ্যোক্তা ও কর্মজীবী এই জরিপের আওতাভুক্ত ছিলেন।

ব্র্যাক জানিয়েছে, খুচরা বিক্রয় কর্মীরা দৈনিক গড়ে ১১ ঘণ্টা কাজ করেন, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বার্ষিক ছুটি পেলেও মাতৃত্ব বা পিতৃত্বকালীন ছুটি পান না। মাত্র অর্ধেক কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষার নীতিমালা রয়েছে।

জরিপে আরও জানা যায়, এই খাতে কর্মীদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। ৬৮ শতাংশ খুচরা বিক্রেতার মতে, তাদের কর্মচারীরা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে অক্ষম।

৫৪ ভাগ বলেছেন, তাদের কর্মচারীদের যোগাযোগের দক্ষতা নেই, আর ৬৮ দশমিক ৬ ভাগ বলেছেন তাদের কর্মীদের পণ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবের কথা।

ব্র্যাক জানিয়েছে, তবে আশার কথা হচ্ছে, বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র সুরক্ষা সরঞ্জাম দ্বারা সজ্জিত। এই হার সিলেটে ৯৩, চট্টগ্রামে ৮২, ঢাকায় ৭২ এবং খুলনায় ৫৬ শতাংশ । এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের ৯৮, ঢাকায় ৯২, খুলনায় ৮৯ এবং সিলেটের ৫৬ শতাংশ খুচরা বিক্রেতারা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং খাবার পানির ব্যবস্থা রেখেছেন।

ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি (এসডিপি) আয়োজনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়োগের আগে প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেন আলোচকরা।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক এস এম শাহজাহান বলেন, “প্রশিক্ষিত লোকেরা নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেলে এই খাতটিতে প্রশিক্ষণভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

”প্রশিক্ষণ শেষে প্রার্থীকে অবশ্যই একটি সনদপত্র দিতে হবে যাতে একজন নিয়োগকারী তার দক্ষতার মূল্যায়ন করতে পারে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “কর্মীরা দক্ষ হওয়ার পরেও পর্যাপ্ত প্রণোদনা না পেলে দক্ষতার বিকাশে আগ্রহী হবে না। এছাড়াও খুচরা বিক্রয় খাতে কর্মসংস্থান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন করতে স্টেকহোল্ডারদের প্রচারণা চালানো দরকার।”

মানসিকতা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে খুচরা বিক্রয় খাতের অন্যতম সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে শাহীন খান বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক ও মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে। কর্মীদের দক্ষতা সংগ্রহের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুগুলিও চাহিদার উপর নির্ভর করে নিয়মিতভাবে সংশোধন করা দরকার।”

ব্র্যাক জানিয়েছে, তাদের এসডিপি প্রান্তিক যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান দক্ষতা এবং উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রকল্পের দ্বারা একটি খুচরা বিক্রয় মডিউল এবং দক্ষতার মান তৈরি করা হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া প্রথম মডিউল।

ব্র্যাক খুচরা খাতের কর্মীদের জন্য শ্রেণিকক্ষভিত্তিক এবং শিক্ষানবীশভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ ভাগই নারী এবং সাত ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এই প্রশিক্ষণ পরিচালনায় বেসরকারি খাতের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে ব্র্যাক।